ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মানুষের ঢল, যানবাহনের ধীরগতি

গাজীপুরের পোশাক কারখানাগুলো ছুটি শুরু হওয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রায় যাত্রীর ভিড় বাড়ছে। পাশাপাশি পশুবাহী গাড়ি ও গণপরিবহনের চাপ রয়েছে। থেমে থেমে চলছে যানবাহন এবং ঘরমুখো মানুষ পরিবহন সংকটে পড়েছেন। ঈদে ঘরমুখো মানুষ মহাসড়কের চন্দ্রায় ভোগান্তি ছাড়াই পার হচ্ছেন। কোনও যানজট না থাকলেও থেমে থেমে চলছে যানবাহন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চিত্র স্বাভাবিক রয়েছে। কোনও যানজট নেই। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বেলা ১১টার পর থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় মহাসড়কের চিত্র এটি।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলার যাত্রীরা চলাচল করেন।

মহাসড়কের চন্দ্রা, নবীনগর, চন্দ্রা চৌরাস্তা ও চন্দ্রা মির্জাপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার জুড়ে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। প্রতি বছরই এই দুই ঈদ ছাড়াও যেকোনও লম্বা ছুটি বা উৎসবে ভোগান্তিতে পড়তে হয় উত্তরবঙ্গের ১৭টি জেলার যাত্রীদের প্রবেশ মুখ চন্দ্রায়। 
যাত্রীরা বলছেন, দুপুরের পর থেকেই যাত্রীদের ঢল নামার সঙ্গে সঙ্গেই পরিবহন সংকট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। পাশাপাশি বরাবরের মতোই বাস মালিক ও চালকরা তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার চিন্তাও মাথায় রয়েছে যাত্রীদের। 
অতিরিক্ত ভাড়ার ঝামেলা এড়াতে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল, পিকআপ ও ট্রাকে করে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

গাজীপুরে দুই হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ১৫৪টি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় লাখ লাখ কর্মী কাজ করেন। যানজট নিরসন ও ঈদুল আজহার এবারের যাত্রায় স্বস্তিতে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফিরতে মহাসড়কে চার হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (এআইজি) দেলোয়ার হোসেন মিঞা।

পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরাও কাজ করছে। বৃষ্টির কারণে ঈদযাত্রা কিছুটা বিঘ্ন হলেও এবারও ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ ছাড়াও মহাসড়কে ৬৭টি স্থানে খানাখন্দ ও ২৮৫টি দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় যাত্রী ও চালকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করার পরামর্শ দেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী, ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা চৌরাস্তা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রায় যাত্রীদের ভিড় দেখা গেলেও কোথাও যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়নি। তবে গাড়িগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় যেন না করতে পারে এবং ঘুরমুখো মানুষ যেন স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মহাসড়কে কাজ করছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশাম গ্রামের মমিনুল ইসলাম বলেন, স্ত্রীসহ গাজীপুরের পোশাক কারখানায় চাকরি করি। দুপুরের পর থেকে জেলার সব পোশাক কারখানা ও সাভার, আষুরিয়ার পোশাক কারখানা একযোগে ছুটি হয়ে যাবে। তাই পরিবার নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টঙ্গীর চেরাগআলী থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া ও যানজট নেই বললেই চলে। তবে থেমে থেমে যানবাহন চলছে।

লালমনিরহাটের সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের চর গোকুন্ডা গ্রামের জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি, আমার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে গাজীপুরের ভোগড়া-বাইপাস এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করি। সকালে অফিসে গিয়ে বিদায় নিয়ে এসে পড়েছি। বোনাস আগেই দিয়ে দিয়েছে। দুপুরের পর থেকেই ঘরমুখী মানুষের যাত্রা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। তখনই শুরু হবে যানজট। এর প্রভাব পড়বে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রায়। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা ঢুকবে, তাই অফিসে লেট না করে যানজট ও বাড়তি ভাড়ার ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছি।

নাওজোড় (কোনাবাড়ী) মহাসড়ক থানার ওসি সওগাতুল আলম জানান, মহাসড়কের চন্দ্রা অংশ যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশ রাত দিন দায়িত্ব পালন করছে। ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কের চন্দ্রা অংশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে উপযুক্ত প্রমাণসহ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাণীগাঁও গ্রামের সবদর আলী ও তার স্ত্রী রেনুকা বেগমের সঙ্গে সকাল সাড়ে ১০টায় কথা হয় গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায়। তারা বলেন, টঙ্গীর পোশাক করাখানায় চাকরি করেন। সকাল সাড়ে ৯টায় বাসা থেকে বাড়ির উদ্দেশে বের হয়েছেন। সড়কে আপাতত কোনও যানজট নেই। খুব ভালোভাবেই বাড়ি ফিরতে পারবো। তরে তারা আশঙ্কা করছেন, বিকাল ৩টার পর থেকে মহাসড়কে যানবাহন এবং যাত্রীর চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটও বেড়ে যেতে পারে।

ময়মনসিংহের নান্দাইলে উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের বনহাটি (গাঙ্গাইলপাড়া) গ্রামের হুমায়ুন কবির। চাকরি করেন গাজীপুরের পূবাই এলাকার একটি পোশাক কারখানায়।

তিনি বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ৯টার মধ্যে বেতন দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। আমাদের যাত্রার কথা চিন্তা করে কারখানা মালিকের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি মহাসড়কে কোনও যানজট এবং যাত্রীর কম চাপ থাকায় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ধন্যবাদ জানান।

সালনা হাইওয়ে থানার ওসি শওকাতুল আলম বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় যানজট মোকাবিলায় মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি, থানা পুলিশ, সেনা সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই ঈদের রাত পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ থাকবে। আশা করছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় মহাসড়কে যানজটমুক্ত পরিবেশে যাত্রীরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়িতে পৌঁছতে পারবেন।