নির্বাচনি সহিংসতার রেশ কাটছে

স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে জোয়ারিয়া গ্রাম

গোপালগঞ্জগোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের জোয়ারিয়া গ্রামে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বাড়িঘরে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। চার/পাঁচ দিনের মধ্যে পুরো ওয়ার্ডে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
গত ২২ মার্চ রাতে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় পরদিন নব নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান সুষেন সেনসহ তিন’শজনের বিরুদ্ধে টুঙ্গিপাড়া থানায় মামলা করা হয়। এছাড়া ঘটনার রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুষেন সেনসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার এড়াতে ৮নং ওয়ার্ডের জোয়ারিয়া গ্রামের মানুষ বাড়িঘর ফেলে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। জেয়ারিয়া  গ্রাম প্রায় জনমানব শূণ্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ওই গ্রামের প্রয়াত শিক্ষক নরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। চোরের দল ওই বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নেয়। জেয়ারিয়া গ্রামের জুড়ান গাইনের ছেলে রতন গাইন গ্রেফতার এড়াতে গোপালগঞ্জে এসে ২৩ মার্চ সড়ক দুর্ঘটনায় ভাটিয়াপাড়ায় মৃত্যুবরণ করেন। জোয়ারিয়া গ্রামে লোকজন ছিলো না। তাই ওই দিন রাত ১০টার দিকে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থেকে লোকজন এসে রতনের লাশ দাফন করে। রতন বাবা মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান। ছেলেকে হারিয়ে তারা শোকে পাথর হয়ে গেছেন।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকার প্রতিনিধি আলহাজ্ব শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ গত ২৬ মার্চ জোয়ারিয়া গ্রাম পরিদর্শন করে গ্রামবাসীকে বাড়ি-ঘরে ফিরে আসার আহ্বান জানান। এর আগের দিন ২৫ মার্চ টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা, পৌর মেয়র শেখ আহমেদ হোসেন মীর্জা, টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি মাহামুদুল হক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস জোয়ারিয়া গ্রামে শান্তি সমাবেশ করেন। এ সমাবেশ থেকে তারা গ্রামবাসীকে নির্ভয়ে গ্রামে ফিরে আসার আহ্বান জানান। পুলিশ তাদের হয়রানি করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়। তারপর থেকেই জোয়ারিয়া গ্রামের মানুষ বাড়ি ঘরে ফিরে আসতে শুরু করে।

জানা গেছে, গত ২২ মার্চ নির্বাচন শেষে গোপালপুরের ২নং ওয়ার্ডের জোয়ারিয়া সপ্তপল্লী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে নির্বাচনি মালামাল নিয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সদরের উদ্দেশে গাড়িতে করে নির্বাচনি কর্মকর্তা, পুলিশসহ নির্বাচনি কাজে সংশ্লিষ্টরা রওনা দেয়। রাত ৯টার দিকে তাদের গাড়ি গোপালপুর বাজারে পৌঁছালে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। এতে পুলিশের এসআই গনেশ বিশ্বাস আহত হন। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. রাশিদুজ্জামান বাদী হয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সুষেন সেন এবং টুঙ্গিপাড়া শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক লিটন বাড়ৈসহ ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

গোপালপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের জোয়ারিয়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রীবাস জানান, ওই ওয়ার্ডের নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী শিশির ঢালীকে দু’ বার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। শিশিরের সমর্থকরা আনন্দ উল্লাস করে। পরে আবার ভোট গননা করে সমীর বিশ্বাসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়েই হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গোপালপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার বিভূতিভূষণ মণ্ডল বলেন, পুলিশ এলাকার কাউকে হয়রানি করছে না।  এছাড়া  টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের  নেতৃবৃন্দ, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ওসি এলাকায় শান্তি সমাবেশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচননি এলাকার প্রতিনিধি শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা এলাকাবাসীকে গ্রামে ফিরে আসার কথা বলেন। এ কারণে গ্রামের মানুষ এলাকায় ফিরে আসছে। চার/পাঁচ দিনের মধ্যে সবাই ফিরে আসবে।

/বিটি/