পরিবার থেকে দীর্ঘদিন ‘বিচ্ছিন্ন’ ছিল মুকুল রানা

মুকুল রানাপুলিশের সঙ্গে ঢাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত সাতক্ষীরার মুকুল রানা ওরফে শরিফুল দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে কিছুটা ‘বিচ্ছিন্ন’ ছিল। সে কোথায় থাকতো, কী করতো তাও জানতো না তার পরিবারের সদস্যরা। সবশেষ গত কয়েক মাস আগে কে বা কারা তাকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায় বলেও দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন আসামি মুকুল রানা। সে বিভিন্ন সময় ভিন্ন নাম ব্যবহার করে পরিচয় গোপন করে আসছিল বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ইউসুফ আলী।
এর আগে তাকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল সরকার। সে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য এবং বেশ কয়েকটি গুপ্তহত্যায় জড়িত ছিল বলে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
নিহত মুকুল রানার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামে। তার পিতার নাম আবুল কালাম আজাদ। মাতার নাম সখিনা বেগম।
নিহত শরিফুলের দুলাভাই হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, মুকুল কোনও দলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল কি না তা আমরা জানি না। ঢাকায় সে কী করতো তাও জানতাম না। এর আগে তাকে ধরিয়ে দিতে পত্রিকায় ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল কি না তা আমরা জানি না। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর টেলিভিশনে দেখে আমরা চিনেছি।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, মুকুল ২০০৮ সালে সাতক্ষীরার ধুলিহর আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে। সাতক্ষীরা ডে-নাইট কলেজ থেকে ২০১০ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করে।

এরপরে ২০১০-১১ সেশনে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়ে প্রথম বর্ষে নিয়মিত ক্লাস করলেও পরবর্তীতে আর ক্লাস করেনি।

গত ৪ মাস আগে যশোরের ঝুমঝুমপুর এলাকায় বিয়ে করে মুকুল। তার স্ত্রীর নাম মহুয়া।

মহুয়ার বরাত দিয়ে এলাকাবাসী জানায়, বিয়ের ৪ দিন পর ঝুমঝুমপুর থেকে সাতক্ষীরায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে যশোরের মনিহার সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকা থেকে সাদা পোশাকধারী লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তারা মুকুলের কাছে থাকা একটি ল্যাপটপ ও একটি ব্যাগ নিয়ে যায়।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মুকুল রানা মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। প্রথম বর্ষে নিয়মিত ক্লাস করলেও পরবর্তী বছরগুলোতে ক্লাসে তার উপস্থিতির হার ছিল খুবই কম।

এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার সঙ্গে মুকুল ওরফে শরিফুল সরাসরি জড়িত ছিল। এছাড়া প্রকাশক টুটুল হত্যা প্রচেষ্টার দিন সে ঢাকার লালমাটিয়ায় বাড়ির সামনে অবস্থান করছিল এবং ওয়াশিকুর রহমান বাবু, আশুলিয়ার রিয়াজ মোর্শেদ বাবু হত্যা মিশনের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে শরিফুল ওরফে মুকুল।

উল্লেখ্য, শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকার খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হয় মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম। নিহত হওয়ার দুদিন পর সোমবার বেলা ১১টার দিকে তার লাশ শনাক্ত করেন তার স্বজনরা।


এপিএইচ/এজে