‘বেঁচে ফিরেছি, তাই দেশের জন্য কাজ করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে’

শিশুদের সঙ্গে আব্দুল আজিজএকাত্তরে দেশের জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে আনেন স্বাধীনতা। বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেন হানাদারদের। জীবন নিয়ে ফিরতে পারায় এখনও নিজের যুদ্ধ শেষ হয়নি বলে মনে করে মাগুরার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ। নতুন প্রজন্মকে দেশের প্রতি দায়িত্ববান করে গড়ে তুলতে এবং আগামী বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে দেখার জন্য অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। মাগুরার নিভৃত পল্লী রাউতাড়ায় নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা মোস্তফা আজিজ আর্ট স্কুলে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতার মাধ্যমে দেশপ্রেম তৈরির নতুন যুদ্ধে সামিল হয়েছেন  বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ।

১৯৭১ সালে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় মুক্তিযুদ্ধে চলে যান আব্দুল আজিজ। ৮ নম্বর সেক্টরে অংশ নেন যুদ্ধে। অসংখ্য সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন সেসময়। যুদ্ধের পর এইচএসসি পাশ করে বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ১৫ বিঘা জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেন। অনেক চাকরির সুযোগ এলেও জন্মস্থান ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি হননি। ১৯৮৫ সালে তিনি মাগুরা-ঝিনাইদহ মাহাসড়কের পাশে নিজের জমিতেই গড়ে তোলে একটি আার্ট স্কুল। উদ্দেশ্য, গ্রামীণ শিশুদের শিল্প-সংস্কৃতির পথ দেখানো এবং তাদের মধ্যে দেশপ্রেম গড়ে তোলা।

এরপর থেকে আর থেকে আর থেমে থাকেননি আব্দুল আজিজ। নিজের সীমিত ক্ষমতা দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুলের কার্যক্রম। তার শিক্ষকের নামে স্কুলের নাম রেখেছেন মোস্তফা আজিজ আর্ট স্কুল। প্রতি শুক্রবার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের প্রায় ২০০ শিশুকে নিয়ে কাটে তার সময়। শুধু চিত্রাঙ্কনই নয়। মুক্তিযুদ্ধের গল্প, গান, নাচ সবকিছুই করা হয় সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। বিনিময়ে কোনও বেতন বা চাঁদা নেন না তিনি। বরং শিশুদেরকে আপ্যায়ন করেন মুড়ি, মুড়কি,মোয়া, বাতাসা দিয়ে।

শিল্পী আজিজ বলেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভাবি না কখনও। যিনি মুক্তিযুদ্ধে যান জীবন বিলিযে দিতেই যান। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের পর আমি প্রাণে বেঁচে ফিরতে পেরেছি তাই জীবনের শেষ পর্যন্ত দেশের জন্য কাজ করা আমার দায়িত্বের মধ্যেই পরে। নতুন প্রজন্মকে যদি সত্যিকারের সংস্কৃতির শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশপ্রেমিক হিসেবে সৃষ্টি করা যায় তবে এদেশে জঙ্গিবাদ আর সাম্প্রদায়িকতা এমনিতেই নির্মূল হবে।’

স্কুলের একজন অভিবাবক জানালেন, ‘আব্দুল আজিজ তার নিজের সামর্থ্য দিয়েই সবকিছু করার চেষ্টা করেন। গ্রামের দুই একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ তার পাশে থাকলেও সরকারি বা বেসরকারি কোনও সহযোগিতা তিনি পান না। তারপরও তার মনোবল কখনো নষ্ট হতে দেখিনি।’

আরও পড়ুন- 

ভোটের পর নারায়ণগঞ্জ আ.লীগ-বিএনপিতে নতুন মেরুকরণ

‘আপনারাই হিসাব করে দেখুন, আমাদের মাস চলে কী করে’

/এফএস/