দফায় দফায় পাথরের দাম বাড়াচ্ছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

বৃহত্তম পদ্মা সেতুসহ সরকারি-আধাসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পাথরের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দফায় দফায় পাথরের দাম বাড়াচ্ছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সব ধরনের পাথর আমদানি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আরকোনও উপায় থাকবে না বলে জানিয়েছেন দেশের পাথর আমদানিকারকরা।

বন্দর দিয়ে আসছে পাথরবোঝাই ট্রাকহিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাথরের দাম বাড়ার পূর্বে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৫০ ট্রাক বোল্ডার, চিপস পাথর আমদানি হতো। এখন পাথরের রফতানি মূল্য বাড়ানোর ফলে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানির পরিমান কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১১০ ট্রাকে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ২ হাজার ১১টি ট্রাকে ৮৮ হাজার ৭৪০ টন পাথর আমদানি হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে ২ হাজার ৫১৮টি ট্রাকে ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ টন পাথর আমদানি হয়েছে। মার্চ মাসে ২ হাজার ৯১৫টি ট্রাকে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭২১ টন পাথর আমদানি, আর চলতি এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ২ হাজার ৪৮টি ট্রাকে ৯৪ হাজার ৮৬৩ টন পাথর আমদানি হয়েছে।

স্থলবন্দরে পাথর কিনতে আসা ব্যবসায়ী মেহেদুল ইসলাম জানান, আগে হিলিতে আমরা একটন থ্রি-ফোর সাইজের পাথর কিনতাম ২ হাজার ৬৮০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা করে। এখন সেই পাথর কিনতে হচ্ছে টনপ্রতি আড়াইশ টাকা থেকে তিনশো টাকা বেশি দরে। এরপরও পাথর ঠিক সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না।

ট্রাকে লোড করা হচ্ছে পাথরহিলি স্থলবন্দর থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে পাথর সরবরাহকারী আব্দুল হালিম জানান, দেশে পাথরের বেশ চাহিদা থাকার কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমানে পাথর আমদানি হতো। বর্তমানে ভারতের ব্যবসায়ীরা পাথরের মূল্য বাড়িয়েছে। ফলে হিলি স্থলবন্দরেও পাথরের দামও বেড়ে গেছে।

হিলি স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট মো. শাহিনুর রেজা শাহীন বলেন, ‘দেশে পাথরের চাহিদা থাকায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথরের আমদানি বেড়ে গিয়েছিল। নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুসহ দেশের বিভিন্নস্থানে কন্সট্রাকশন ও সড়কের কাজে বেশি প্রয়োজন হওয়ায় এবং বেশ চাহিদা থাকায় পাথর রফতানিকারকরা মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে যেকোনও সময় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথরের আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, ‘আমরা ভারতের ওপর পাথর আমদানিতে নির্ভর হয়ে পড়েছি। গড়ে প্রতদিন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টন পাথর আমদানি হচ্ছে। বাংলাদেশে পাথরের চাহিদা বাড়ায় গত এক মাসের ব্যবধানে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা টনপ্রতি ৩০০ টাকার মতো দাম বাড়িয়েছেন। আগে যেখানে একটন পাথর ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ রুপিতে কিনতে হতো এখন সেখানে পাথর কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ রুপি থেকে ১ হাজার ৭০০ রুপিতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রফতানিমূল্য কমাতে ও আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার জন্য গত ২০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) ভারতীয় পাথর রফতানিকারকদের একটি চিঠি দিয়েছিলাম। এর পরিপেক্ষিতে ভারতীয় পাথর রফতানিকারকরা আমাদেরকে পাথরের রফতানি মূল্য কমানোর মৌখিক আশ্বাস প্রদান করেছিলেন। কিন্তু এখনও তারা আমাদের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসেননি।’ এ অবস্থা চলতে থাকলে আমদানিকারকরা পাথর আমদানি বন্ধ করে দেবে বলেও জানান তিনি।

/এমও/