সরেজমিনে জানা গেছে, মিটার রিডারদের চরম দৌরাত্ম ও কারসাজির কারণে বিদ্যুৎ গ্রাহকের হয়রানি ও দুর্ভোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতি মাসে মিটারের ইউনিট তদন্ত করেই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ইস্যু ও সরবরাহ করার নিয়ম। কিন্তু অধিকাংশ গ্রাহকদের মিটার না দেখেই মিটার রিডাররা বাড়িতে বসে অনুমান নির্ভর মনগড়া ও ভুয়া বিল তৈরি করেছেন। যা শুধু অসঙ্গতিপূর্ণই নয়, রীতিমতো হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা।
উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আবাসিক গ্রাহক ছানোয়ার হোসেন জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৬ মাসে তার ১৬৫ ইউনিটের বিলপত্র দেওয়া হয়েছে। অথচ শুধু আগস্ট মাসে তার ৩৫০ ইউনিটের বিপরীতে মোট বিল এসেছে ৮৭৬ টাকা। যা গত ৬ মাসের দ্বিগুণ।
একই গ্রামের আবাসিক গ্রাহক হাসান মল্লিক জানান, তার মে মাসে বিদ্যুৎ বিল হয়েছিল ১৩৯ টাকা এবং জুন মাসে বিল হয়েছিল ২৫৯ টাকা। কিন্তু সেখানে আগস্ট মাসে বিল এসেছে ১ হাজার ৯৫ টাকা।
তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৬ মাসে মোট ১৩৫ ইউনিটের বিল এসেছে। আর শুধু এ মাসেই আমার ২১৫ ইউনিটের বিল এসেছে। যা গত জুন মাসের ৫ গুণের বেশি।
হাসাদাহ বাজারের আবাসিক বিদ্যুৎ গ্রাহক শ্যামল জানান, তার বাড়িতে প্রতিমাসে ৩শ’ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল আসে। কিন্তু এ মাসে ১ হাজার ৫শ’ টাকার বিল এসেছে। এ অভিযোগ শুধু ছানোয়ার হোসেন, হাসান মল্লিক ও শ্যামলের নয়, উপজেলার প্রায় ৯৫ ভাগ বিদ্যুৎ গ্রাহকের একই অভিযোগ।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জীবননগর এলাকার আঞ্চলিক পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান পিল্টু বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাঠ পর্যায়ে মিটার রিডিং সংগ্রহকারীরা (মিটার রিডার) গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার না দেখে নিজ বাড়িতে বসে আন্দাজে মিটার রিডিং লিখেছে। যার কারণে বিদ্যুৎ বিলে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া বাড়িতে বসে বিল তৈরি করার কারণে আগের মাসগুলোতে কম করে ইউনিট দেখানো হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ওই উদ্বৃত্ত ইউনিটগুলো সমন্বয় করার ফলে গ্রাহদের ওপর বাড়তি বিলের বোঝা চেপে গেছে। এছাড়া ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের প্রতি ইউনিটের বিদ্যুৎ বিল খরচ হয় ৩ টাকা ৮০ পয়সা এবং ৭৫ ইউনিটের পরে প্রতি ইউনিটের খচর পড়ে ৫ টাকা ১৪ পয়সা। এক্ষেত্রে ৭৫ ইউনিটের পরে প্রতি ইউনিটে গ্রাহকদেরকে ১ টাকা ১৪ পয়সা অতিরিক্ত গুণতে হয়। এ কারণে উদ্বৃত্ত ইউনিটগুলো সমন্বয় করার ফলে গ্রাহদের ওপর অবিচার করা হয়েছে।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দর্শনা সাব জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রাহকদের মিটার সরেজমিনে দেখে রিডিং লেখেন মিটার রিডাররা। কিন্তু তারা অনেকে মিটার না দেখেই রিডিং লেখায় ওই সমস্যা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের যেসব কর্মচারী ঘরে বসে মিটার রিডিং তৈরি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
/এআর/