তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবনের মাছ, কাঠ, মধু থেকে বিপুল রাজস্ব আসে। এর পাশাপাশি বড় অংকের রাজস্ব আসে পর্যটকদের কাছ থেকে। কিন্তু নানা কারণে সুন্দরবনে বিদেশি পর্যটক আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। আর এতে করে প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে। গত ২০১২-১৩ অর্থ বছর থেকে ২০১৬-১৭ এ পাঁচ অর্থ বছরে সুন্দরবন থেকে পর্যটনখাতে অন্তত কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।’
আজাদ কবির আরও বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ও অন্যতম দর্শনীয় এ বন দেশের রাজস্ব আয়ের দিক থেকেও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সে হিসেবে, ২০১২-১৩ সালে সুন্দরবনে বিদেশি পর্যটক এসেছিল ৩ হাজার ৮৫৪ জন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে তা নেমে এসেছে ২ হাজার ১২৯ জনে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৬৫ জন। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে তা বেড়ে ৩ হাজার ৭শ৪১ জনে পৌঁছালেও ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ফের কমে ২ হাজার ৫৩৭ জনে নেমে যায়।
পূর্ব সুন্দরবনের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা সত্যজিৎ সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১২-১৩ অর্থ বছরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের পর্যটকদের কাছ থেকে পাওয়া মোট রাজস্ব ছিল ১ কোটি ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯০ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে যা কমে দাঁড়িয়েছিল ৬৭ লাখ ৪ হাজার ৬০ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে তা বেড়ে ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ২৭০ টাকায় পৌঁছালেও ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ফের ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮০ টাকায় নেমে যায়। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে রাজস্ব আয় হয় ৮২ লক্ষ ৬১ হাজার ৬১০ টাকা, যা ২০১২-১৩ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২১ লাখ টাকা কম। এ হিসেবে গত পাঁচ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে অন্তত কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।’
সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটক আসা কমে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাবসহ নানাবিধ সমস্যা। পর্যটকদের প্রথমত প্রয়োজন হয় একটু হাত-মুখ ধুয়ে বিশ্রাম নেওয়ার। সেই বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ইজারা দেওয়া পিকনিক কর্নারে ও বন বিভাগের রেস্ট হাউস সংলগ্ন জায়গাতেও নেই একটি বিশ্রামাগার কিংবা যাত্রী ছাউনি।
খুলনা থেকে আসা সম্রাট নামে একজন পর্যটক জানান, সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তারক্ষী দিতে পারলেও নেই গাইডের ব্যবস্থা। একজন নিরাপত্তাকর্মী নিতে হলে এর জন্য বন বিভাগকে আলাদা টাকা দিতে হয়। অনেকেই টাকার অভাবে নিরাপত্তারক্ষী নিতে পারে না। এজন্য তাদের ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে বন ভ্রমণ করতে হয়।
সুন্দরবন ভ্রমণ শেষে ফিরে যাওয়া ময়মনসিংহ থেকে আসা আরেক পর্যটক আবু বাছেদ তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে জানান, সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করা গেলেও এর মধ্যে তাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হওয়ায় অনেক আনন্দই ম্লান হয়ে গেছে। সুন্দরবনে ভ্রমণে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের বন সংরক্ষক মো. আমির হোসেন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন বিভাগের পক্ষ থেকে পর্যটকদের কোনও হয়রানি করা হ য়না। তবে পর্যটন স্পটগুলোতে অবকাঠামোগত অনেক ঘাটতি আছে। পর্যাপ্ত বাজেট পেলে পর্যায়ক্রমে পর্যটন স্পটগুলোতে জেটি ও অবকাঠামো নির্মাণসহ উন্নত ও আধুনিকায়ন করা হবে। তারপরও বর্তমানে যে ব্যবস্থা রয়েছে তাতে পর্যটক আসলে আমরা সাধ্যমত সেবা দেয়ার চেষ্টা বন বিভাগের করি।’