৭ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় মাগুরা

maguraআজ ৭ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার মাগুরা মুক্ত দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে মাগুরা হানাদার মুক্ত হয় । এই দিনে মাগুরায় উড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ।

দিবসটি উপলক্ষে মাগুরায় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা মুক্তযোদ্ধা সংসদ, মাগুরা পৌরসভাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে দিনভর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আনন্দ শোভাযাত্রা, সন্ধ্যায় ব্ল্যাক আউটের মাধ্যমে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

কর্মসূচির আয়োজক সংরক্ষিত-১০ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল লায়লা জলি বলেন,‘ এটি বিশেষ কোনও সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান নয়, এটি মাগুরাবাসীর আয়োজন। দলমত নির্বিশেষে সমস্ত মাগুরাবাসী কর্মসূচিকে সফল করে তুলবে বলে আশা করছি।’

দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মাগুরার বিভিন্ন বাহিনীর যোদ্ধারা বিভিন্ন রণাঙ্গনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন যা জাতীয় পর্যায়েও প্রশংসা অর্জন করে। এগুলোর মধ্যে মহম্মদপুর থানার টিটিডিসি, নহাটা-জয়রামপুর রাস্তা, বিনোদপুর বাজার ক্যাম্প, তৎকালীন ঝিনেদা মহকুমার শৈলকুপা থানা, একই থানার কামান্না, মাগুরা আনসার ক্যাম্প, আরালিয়া-শ্রীমন্তপুর, ফরিদপুরের রামদিয়া-সোনাপুর, শ্রীপুর থানা, মীনগ্রাম মান্দারতলা, খামারপাড়া ও কাদিরপাড়া মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় সাফল্যে অনেকখানি দাবিদার।

মাগুরার মুক্তিযোদ্ধারা তৎকালীন মাগুরা ও ঝিনেদা মহকুমার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ফরিদপুর জেলার একটি অংশকে শত্রুমুক্ত করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। তাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের অনেক ঘটনা তৎকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় যা জাতীয় সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধারা অবিরত হামলায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর তাদের দোসরদেরকে কোণঠাসা করে ফেলে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যশোর থেকে পাকিস্তানি সেনাদের একটি অংশ মাগুরায় পালিয়ে আসে। একপর্যায়ে মাগুরায়ও তারা তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে। মিত্রবাহিনীর সঙ্গে মাগুরার মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা প্রবল আক্রমণে শত্রুবাহিনীকে মাগুরা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা মাগুরা ছেড়ে ফরিদপুরের কামারখালী অভিমুখে চলে যেতে বাধ্য হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় আকবর হোসেন মিয়া এবং মোল্লা নবুয়ত আলীর নেতৃত্বে শ্রীপুর বাহিনী মাগুরায় প্রবেশ করে প্রশাসনিক দায়িত্বভার গ্রহণ করে। এ সময় মুক্তিপাগল জনতা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এভাবেই ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ মাগুরা হানাদারমুক্ত হয়।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে মাগুরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোল্লা নবুয়ত আলী বলেন, ‘ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মুক্তিযোদ্ধারে অবিরত আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। ৬ ডিসেম্বর থেকেই তারা পালাতে শুরু করে। ৭ ডিসেম্বর ভোর হওয়ার আগেই মাগুরা হানাদারমুক্ত হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মাগুরাবাসী বিজয়ের আনন্দে রাস্তায় নেমে আসে।’