মোংলা উপজেলার বাগেরহাট জেটি (পাকিস্তান শাসনামলে বেঙ্গল ওয়াটর জেটি), সুন্দরবন ইউনিয়নের দামের খণ্ড এবং বর্তমান নেভি ক্যাম্পের হারবার জেটি এলাকায় শহীদদের লাশ দাফন ছাড়াই পুঁতে ফেলা হয়।
মোংলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আ. রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাজনৈতিক বৈষ্যমের কারণেই তাদের স্মৃতি রক্ষা করা যায়নি।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পরও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিসহ মানচিত্র থেকে বাংলাদেশকে মুছে ফেলতে পাকিস্তানি দোষররা নানা ষড়যন্ত্র করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এখনও সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার দল আওয়ামী লীগ ২৬ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস সংরক্ষণের চেষ্টা করেছি। তাদের স্মৃতি রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু আবার যখন ক্ষমতা হারালাম তখন সেসব উদ্যেগ ভেস্তে যায়।
এখনতো টানা দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। এমন প্রশ্নের উত্তরে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নানা সুযোগ সুবিধা তার সরকারই করে দিয়েছে। এক কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব মুক্তিকামী বাঙালি গণহত্যার শিকার হয়ে শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মোংলা উপজেলায় আলাদা তিনটি বধ্যভূমি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথমে সুন্দরবন ইউনিয়নের দামের খণ্ড এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে আরও দুইটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
মোংলা উপজেলার আরেক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী ইজারদার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মোংলা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রায় দুই হাজার মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে নিয়ে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও এখানে তাদের স্মৃতি না থাকা আমাদের জন্য লজ্জার।
এমন পরিস্থিতির জন্য রাজনীতিবিদদেরই দায়ী করেন ইদ্রিস আলী ইজারদার। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় ছিলেন সাড়ে তিন বছর। এরপর জেনারেল জিয়াউর রহামান, এরশাদ। এভাবেই বিএনপি, আওয়ামী লীগ। কিন্তু স্বল্প সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যা করেছেন তা কোন সরকারই করেনি। তবে রাজনৈতিক কারণে অনেক কাজই করা যায়নি।
তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, মোংলা উপজেলায় শহীদদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ যেন দ্রুত তৈরি করা হয়। অন্যথায় পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না দেশের জন্য মোংলার সূর্য সন্তানদের অনন্য অবদানের কথা।