বসন্ত, ভালোবাসা আর ভাষা দিবস উপলক্ষে ব্যস্ত গদখালীর ফুলচাষিরা

গদখালীর ফুলের বাগানবসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা-ওই তিনটি দিবসকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন যশোরের গদখালীর ফুলচাষিরা। সময়মতো যাতে ফুল তুলতে এবং পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেন তা নিয়ে এখন তারা ব্যস্ত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সময়মতো ফুল পাঠাতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন। বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের পাশেই গদখালী। এ এলাকা ‘ফুলের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত। গদখালীর বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাসসহ নানা রঙের ফুল। এখান থেকেই দেশজুড়ে ফুল সরবরাহ করা হয়। বছরের এ সময় বেশ ব্যস্ত সময় কাটান এখানকার ফুলচাষিরা।

১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখেই এখন তাদের ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। তারা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। বসন্ত  আর ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের এলাকায় ফুলের চালান যাওয়া শুরু হয়ে গেছে।

জারবেরা বাগান

গদখালী বাজারে এখন জারবেরার স্টিক বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকায়, রজনীগন্ধা ১-৩ টাকায়, গোলাপ রং ভেদে ৬-১৫ টাকায়, গ্লাডিওলাস ৪-১০ টাকায়, এক হাজার গাঁদা পাওয়া যাচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।

গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের জানান, গত বছর এই সময়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। এবার তা প্রায় ৪০-৪৫ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। তবে মনিরুলের এই বক্তব্যের সঙ্গে অনেকের দ্বিমতও আছে।

তিনি আরও জানান, ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধা ও গোলাপ বেশি বিক্রি হয়। আর গাঁদা বেশি বিক্রি হয় একুশে ফেব্রুয়ারি ও বসন্ত উৎসবে। ফলে সূর্য ওঠার আগেই প্রতিদিন চাষি, পাইকার ও মজুরের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে গদখালীর এই ফুলের বাজার। ফুল পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে।

benapole-flower-picture------6

পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি লেলিন বলেন, ‘সারাদেশে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে যে ফুল বেচা-কেনা হয় তার অন্তত ৭০ শতাংশই যশোরে উৎপাদিত। তবে এবার ফুলের উৎপাদন যেমন বেশি, তেমনি চাহিদা অন্য যেকোনও বারের তুলনায় বেশি।’

স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, সামনে ভ্যালেন্টাইন ডেতে ফুল বিক্রি বেশি হবে। বাজারে জারবেরা, গোলাপ, রজনীগন্ধা ফুলের চাহিদা বেশি। কৃষকরা ও দাম ভালো পাবেন।

গোলাপ বাগান

ফুলচাষি আজগর আলী জানান, এবার তিনি ১০ বিঘা জমিতে গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় বেশি ফুল এসেছে। ফলে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম এবার ফুল বিক্রি ৪০-৪৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন।

benapole-flower-picture---7

তিনি বলেন, এবার ফুলের উৎপাদন, চাহিদা ও দাম সবই বেশ ভালো। এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা সবাই খুশি। এবার চাহিদা বেশি, চাষিরাও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। এ অঞ্চলে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে ফুলচাষিরা বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ করেছেন। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুলের উৎপাদন বেশি হয়েছে। গত বছর  শুধু গদখালি থেকে ৩০-৩৫ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়। এ বছর তা অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফুল চাষকে লাভজনক করে তুলতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নানা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।