আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের মাঝে হয়রানির আশঙ্কা





আত্মসমর্পণ করা দস্যুরা‘প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এক লাখ টাকা কোনও কাজেই আসবে না। এখান থেকে বাড়ি ফেরার পর পুলিশ আসবে, টাকা চাইবে। না দিলে নানা ভয়-ভীতি দেখাবে। বলবে ক্ষমা পেয়ে এলাকায় থাকতে পারছিস, দস্যুতার মামলা কিন্তু এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। ধরার মতো অপরাধও তোদের আছে। নানাভাবে হয়রানি করবে। আর সপ্তাহে সপ্তাহে এসে টাকা চাইবে এবং তা দিতে হবে।’ সুন্দরবনের এক সময়ের দস্যু প্রধান লিটন ওরফে ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেন।

ফারুক খুলনার দাকোপ উপজেলার কালাবগি এলাকার বাসিন্দা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কয়েক মাস আগে দল নিয়ে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেন তিনি। বুধবার (২৩ মে) দুপুরে র্যাব-৬ এর লবনচরাস্ত কার্যালয় চত্বরে ৬ বাহিনীর ৫৭ জন দস্যুর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে আগে আত্মসমর্পণ করা সাবেক ৫৮ দস্যুর প্রত্যেককে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১ লাখ টাকা করে চেক দেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাত থেকে ফারুক সাবেক দস্যু হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ১ লাখ টাকার চেক নেন। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও পুলিশের হয়রানি বন্ধ ও মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানান তিনি। এদিন

ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বাভাবিক জীবনের কথা বলা হলেও সে পরিবেশ পুলিশের কারণে পাচ্ছি না। অনুদান পাওয়া টাকা কাজে লাগাতে না পারলে সুস্থ জীবনযাপন করা কঠিন হবে। পুলিশ বলে— আত্মসমর্পণ করছিস র্যাবের কাছে। পুলিশতো আর মুক্তি দেয়নি। পুলিশের কাছে অপরাধী সব সময় অপরাধী হিসেবেই থাকবে।’


শুধু ফারুক নয়, আত্মসমর্পণকারী অন্যান্য দস্যু ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও একই ধরনের কথা বলছেন। বিষয়টি নিয়ে এখন আত্মসমর্পণ করা দস্যু ও তাদের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বুধবার সুন্দরবনের ৬টি দস্যু বাহিনীর ৫৭ জন সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং এক হাজার ২৮৪ রাউন্ড গুলি হস্তান্তর করে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণ করা দস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এবং সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপনের সুযোগ চায়। একইসঙ্গে পুলিশের হয়রানি বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।
দস্যুরা বলেন, আর্থিক সহায়তার চেয়ে পুলিশের হয়রানি এবং মামলা প্রত্যাহার হলেই তাদের স্বভাবিক জীবনযাপন করা সহজতর হবে।

বুধবারের অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণ করা দাদা ভাই বাহিনীর প্রধান মো. জয়নাল আবেদীন ওরফে রাজন ওরফে দাদা ভাই বলেন, ‘পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চাই। সে উদ্দেশ্যেই সুন্দরবনের ঝূঁকিপূর্ণ জীবনযাপন ছেড়ে আত্মসমর্পণ করেছি। কিন্তু, মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় পুলিশ হয়রানি করে। ফলে পরিবারের সদস্যরা সব সময় আতঙ্কিত থাকে। এ ধরনের হয়রানি বন্ধ না হলে আবার বনে ফিরে যেতে বাধ্য হতে হবে।’

দাদা ভাই বাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মো. জাকির হাওলাদার বলেন, ‘দস্যু জীবন একটি অনিশ্চিত জীবন। এ জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই। এ কারণে সরকারের দেওয়া সুযোগ গ্রহণ করে আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু, তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়। এ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন না।’
আত্মসমর্পণ করা মজিদ বাহিনীর প্রধান তাকবির ওরফে মজিদ বলেন, ‘আমরা র্যাবের কাছে অস্ত্র দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছি। কিন্তু, মামলাগুলোতে রয়েছে পুলিশের মনিটরিং। যা তাদের হয়রানি করার জন্য পুলিশ ব্যবহার করছে।’
আগে আত্মসমর্পণকারী বড় ভাই বাহিনীর প্রধান আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লা বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহার করা না হলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা ও সুষ্ঠু পরিবেশে সাধারণের মতো চলাফেরা করে বেঁচে থাকা খুব কঠিন। কিন্তু ফিরে আসা অপরাধ জগতেও আর ফিরে যেতে চাইনা। আমরা মুক্ত জীবন-যাপন করতে চাই।’
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩০ মে থেকে বুধবার (২৩ মে) পর্যন্ত বিগত ২৪ মাসে সুন্দরবনের ২৬টি বাহিনীর ২৭৪জন দস্যু আত্মসমর্পণ করে। এ দস্যুরা ৪২২ আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৯ হাজার ১৫৩ রাউন্ড গুলি জমা দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৩৪ জন দস্যু নিহত হয়।