মোংলা বন্দর উন্নয়নে ৬ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা দিচ্ছে ভারত

 মোংলা বন্দর

মোংলা বন্দরের উন্নয়নে ছয় হাজার ২৫৬ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দেবে ভারত। চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে এ ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে বলে বন্দরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি আরও জানায়, ২০১৯ সাল থেকে ভারত সরকারের দেওয়া ঋণের টাকা দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হবে।

গত বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দেশটির তৃতীয় লাইন অবক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় বাংলাদেশের জন্য যে সাড়ে চার বিলিয়ন (মার্কিন) ডলার ঋণ চুক্তি করেছেন, সেখান থেকে এ প্রকল্পের অর্থ দেওয়া হবে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়। 

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা (চিফ প্লানিং অফিসার) মো. জহিরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ভারতের দেওয়া ঋণের টাকায় আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় ১২টি কম্পোনেন্ট থাকবে। এগুলো হচ্ছে, বন্দর জেটিতে ১ ও ২ নং কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড নির্মাণ, কন্টেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ, ইয়ার্ড শেড, নিরাপত্তা দেওয়াল অটোমেশন ও অন্যান্য অবকাঠামোসহ বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণ, সার্ভিস ভেসেল জেটি শেড ও অফিস নির্মাণ, বন্দর ভবন (প্রশাসনিক) সম্প্রসারণ, এমপিএ টাওয়ার, পোর্ট রেসিডেনশিয়াল কমপ্লেক্স কমিউনিটি সুবিধাদি নির্মাণ, ইকুইপমেন্ট ইয়ার্ড, ইকুইপমেন্ট শেড ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ এমটি পুল নির্মাণ, সিগনাল রেড ক্রসিং ও ওভারপাস নির্মাণ ও বিনোদন ব্যাবস্থাসহ বাঁধ নির্মাণ এবং ৫ টি হারবার ক্রাফট এয়। 

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মোংলা বন্দরে বর্তমানে যে অবকাঠামো সুবিধা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর বন্দরের ব্যস্ততা আরও বাড়বে। যে কারণে ভারতের কাছ থেকে ছয় হাজার ২৫৬ কোটি টাকার ঋণ সহায়তায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের আধুনিক সুবিধা দেওয়া বলে তিনি জানান।

বন্দরের পদস্থ এ কর্মকর্তা আরও জানান, চট্রগ্রাম বন্দরের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখন মোংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এছাড়া পাশের দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের ট্রানজিট সুবিধার জন্য এ বন্দর ব্যবহারের অনেক আগ থেকেই প্রস্তাব দিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, বর্তমানে মোংলা বন্দরের নিজস্ব জমিতে ১১টি এলপিজি কারখানা, ৫টি সিমেন্ট কারখানাসহ আরও ১০টি শিল্পকারখানা রয়েছে। এছাড়া বন্দর এলাকায় ২৫৮ একর জমিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেপজা) প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এসব শিল্প কারখানার কাঁচামাল মোংলা বন্দরের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে আসছে। ফলে বাণিজ্যিক স্বার্থেই বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

মোংলা বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মোংলা বন্দরকে ঘিরে বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। পদ্মাসেতু থেকে  মোংলা পর্যন্ত চার লেন বিশিষ্ট সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপন, মোংলা ইপিজেড সম্প্রসারণ, স্পোশাল ইকোনমি জোন স্থাপন, রুপসা নদী ও মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মেয়র খালেক বলেন, বিগত জোট সরকার এ বন্দরকে ধ্বংস করতে কোনও উন্নয়ন করেনি। দুর্নীতি করে এ বন্দরকে শেষ করে দিয়েছিল। ওই সময় বন্দরে কোনও জাহাজ আসেনি। মৃতপুরি বন্দরে পরিণত হয়েছিল। সেখান থেকে বর্তমান সরকার এ বন্দরকে টেনে তুলেছে। বন্দর ঘিরে এখন শুধু উন্নয়নের ছোয়া। প্রতিদিনই ৪০ থেকে ৫০টি জাহাজ এ বন্দরে আসছে। এ বন্দর ব্যবহারে বিদেশিদের এখন আগ্রহ বাড়ছে।