খুলনা-৫ আসনে ইমেজ সংকটে চন্দ, দ্বন্দ্ব বিএনপি-জামায়াতেও

এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ড. এম মাহাবুব উল ইসলাম, খান আলী মুনসুর ও গোলাম পরওয়ারআসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক প্রার্থী সক্রিয় রয়েছেন। এখানে ৬ জন প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সবাই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। ধীরে ধীরে তাদের প্রচারণা প্রকাশ্য রূপ পাওয়ায় ডুমুরিয়া ও ফুলতলার রাজনৈতিক ময়দান উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যেও রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ওপর চাপা ক্ষোভ। সে ক্ষোভ দ্বন্দ্ব-কোন্দলের দিকে মোড় নিচ্ছে বলে দাবি আওয়ামী লীগ কর্মীদের একাংশের। এদিকে,বিরোধী জোট বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলেই শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় আসনটিতে মনোনয়ন পেতে তাদের মধ্যে চলছে ইঁদুর দৌড়। নির্বাচনকে সামনে রেখে  উভয় জোটের এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিলে সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন এলাকার রাজনীতি সচেতন মানুষরা।

এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি এবং খুলনা জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ড. এম মাহাবুব উল ইসলাম। অন্যদিকে, বিএনপি-জামাত জোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন খুলনা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. গাজী আবদুল হক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমান, ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সভাপতি খান আলী মুনসুর এবং জামায়াত নেতা সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার।

খুলনা-৫ আসনে সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভিন্ন কারণে তিনি ইমেজ সংকটে ভুগছেন বলে দলীয় তৃণমূল থেকে দাবি করা হচ্ছে। এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠপর্যায়ে জোরালো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন খুলনা জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ড. এম মাহাবুব উল ইসলাম। ইতোমধ্যে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন বলে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মনে করেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘জনগণ তাকে একাধিকবার নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছে। এলাকার উন্নয়নে তিনি যথেষ্ট কাজ করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে এলাকায় মানুষের ভালোবাসায় আবারও তিনি নির্বাচিত হয়ে প্রতিশ্রুত বাকি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন।

খুলনা জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ড. এম মাহাবুব উল ইসলাম জানান, মানুষের পাশে থাকার জন্যই এলাকায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকছেন। এলাকাবাসীর যেকোনও সমস্যায় পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। আসন্ন নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

এই আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বর্তমান এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু এখানে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। বিএনপি এবার কোনওভাবেই জামায়াতকে ছাড় দিতে চায় না। এ আসনে বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে গেলে মিয়া গোলাম পরোয়ারই মনোনয়ন পেতে পারেন।

বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন খুলনা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. গাজী আবদুল হক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমান, ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খান আলী মুনসুর।

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ও দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। দাবি বাস্তবায়ন হলে বিএনপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সবরকম প্রস্তুতি তৃণমূলে রয়েছে।  সে ক্ষেত্রে তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। দলীয় মনোনয়ন নিয়েই ভোটারদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।