ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনও স্থান নেই: ইউজিসি চেয়ারম্যান

বক্তব্য দেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নানবাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেছেন, ‘ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার কোনও স্থান নেই, জঙ্গিবাদের কোনও স্থান নেই। পরস্পরের প্রতি এ ধরনের বিদ্বেষ থেকে সরে আসতে প্রথমে সব বিভেদ দূর করতে হবে। ধর্মে কোনও আশরাফ-আতরাফ নেই; ইসলামে এটি একেবারেই নেই।’

সোমবার সকাল ১০টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠানটির থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ ও তুরস্কের ইস্তাম্বুল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্দ্যোগে ‘গ্লোবাল পিস অ্যান্ড হারমোনি, রিসালা-ই-নূর পারস্পেকটিভ’ শীর্ষক দুদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সমগ্র মুসলমান সম্প্রদায় একটি পরিবার হওয়া উচিত। যেখানে সব কিছুর বিনিময় হতে পারে একটি পরিবারের মানুষগুলোর মতোই। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এই জায়গাটির বড় বিচ্যুতি, আজ একে অপরের থেকে মুসলমান সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। এখানে এখন আমরা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি।’

আবদুল মান্নান বলেন, ‘জ্ঞান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বিশ্বশান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও অগ্রতির সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের তথা মুসলিম উম্মাহর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের অতীত ইতিহাস এ সর্ম্পকে পর্যাপ্ত জ্ঞান দিতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তুরস্কের উস্কুদার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আলপারসলান আছিজেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইবির প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান ও বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহা-পরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল। অনুষ্ঠানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও তুরস্কের ইস্তাম্বুল ফাউন্ডেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকবৃন্দসভাপতির বক্তৃতায় ভিসি ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘বাংলাদেশ ধর্মীয় শান্তি, ঐক্য ও সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মীয় শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার যে নীতি রেখে গেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মূলনীতিতে সংবিধানবর্ণিত সেই পারস্পরিক শ্রদ্ধার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নিজের ধর্মে বিশ্বাস করবো কিন্তু অন্য ধর্মকে খাটো করে দেখবো, তা ঠিক নয়। ধর্মীয় গোড়ামি গ্রহণযোগ্য নয়।’

আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্ট্যাডিজ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন আজহারী ও ইংরেজি বিভাগের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর মো. সাজ্জাদ হোসেন জাহিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ইবির থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আফম আকবার হোসেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— জর্ডানের প্রতিনিধি ড. মামুন ফারিজ মাহমুদ জ্যাররার, ইরাকের প্রতিনিধি রিসালায়ে নূর’র অনুবাদক ইহসান কাসিম সালেহী, সৌদি আরবের কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রফেসর ড. হারুন প্রিমি, আরব আমিরাতের শারজাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক শাইখ আব্দুস সালাম সাঈদ করীম, তুরস্কের প্রতিনিধি সাঈদ উজ্যাদালি, মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনির্ভাসিটির শিক্ষক মো. শাহিদুল ইসলাম ফারুকী ও ভারতের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি স্কলার জুবাইর হামিদ।

বাংলাদেশ এবং তুরস্কের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সম্মেলনে ভারত, তুরস্ক, জর্ডান, সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশসহ মোট ৮টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। দুদিন ব্যাপী এ সেমিনারের পৃথক পৃথক ৮টি সেসনে ৭১টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। তার মধ্যে ইংরেজি প্রবন্ধ থাকবে ৩৮টি এবং আরবি প্রবন্ধ থাকবে ৩৩টি। এছাড়াও বিদেশি প্রবন্ধকার ও বিশেষজ্ঞদের প্রবন্ধ থাকবে ১০টি এবং দেশিয় প্রবন্ধকারদের প্রবন্ধ থাকবে ৬১টি। মঙ্গলবার এক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে দুদিন ব্যাপী এই সেমিনারের সমাপ্তি ঘটবে।