খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে মহকুমা তথ্যকেন্দ্র নামে বাগেরহাট শহরের বর্তমান শালতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে যাত্রা শুরু হয় এই গ্রন্থাগারটির। পরে ১৯৮৪ সালে এটি জেলা সরকারি পাবলিক লাইব্রেরিতে রূপ নেয়। সর্বশেষ ২০০১ সালে শহরের সরুই এলাকায় ৩৩ শতাংশ জমির ওপর একতলা নিজস্ব ভবনে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ সরকারি পিসি কলেজ থেকে এই গ্রন্থাগার ভবনের মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাগেরহাট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৫০০ গজ। এছাড়া সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১০০ গজ এবং সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে এর দূরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার।
সরেজমিনে বিভিন্ন সময় গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পাঠক পত্রিকা পাঠের জন্যই কেবল এখানে আসেন। বই পড়তে আসা পাঠকের সংখ্যা ছিল খুবই কম। প্রতিদিন কতজন পাঠক গ্রন্থাগারে আসেন সেই হিসাবও নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। তাদের দাবি রেজিস্ট্রার না থাকায় পাঠকের প্রতিদিনের প্রকৃত সংখ্যা বলা যাবে না। তবে মাস শেষে টালির মাধ্যমে পাঠক উপস্থিতি নির্ধারণ করা হয়।
গণগ্রন্থাগারে পত্রিকা পড়তে আসা শহরের হরিণখানা এলাকার নিয়াজ পারভেজ বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে চাকুরির আশায় আছি। মূলত এখানে পত্রিকা পড়ার জন্য আসি। পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি চাকুরির বিজ্ঞাপনেও চোখ বুলাই।’
একই কথা বলেন তার সঙ্গে আসা মো. শহিদুল ইসলাম নামের আরেক পাঠক।
বাগেরহাট শহরের দশানি এলাকার তামান্না আক্তার বলেন, ‘সময় পেলে মাঝে-মধ্যে গণগ্রন্থাগারে উপন্যাস পড়তে আসি।’
গ্রন্থাগার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ার প্রবনতা কমে যাওয়া, স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা পাঠক কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একজন শিক্ষিত মানুষের কাছে বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বই চিন্তার খোরাক যোগায়। যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিন্তার খোরাক খুই কম। তাই বই পড়ার কোনও বিকল্প নেই।’
তবে বাগেরহাট গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান দাবি করেন, ‘এখানে তিন ক্যাটাগরিতে নিয়মিত গ্রাহক রয়েছেন ৪৯ জন। প্রতিদিন গড়ে ২৮২ জন পাঠক বই ও সংবাদপত্র পড়তে আসেন। পাঠকদের মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি।’
পাঠকের হার কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে সরকারি গণগ্রন্থাগারের পক্ষ থেকে জাতীয় দিবসগুলো পালন করা হয়। এছাড়া বই পাঠ প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।’