ভোমরায় পচা পেঁয়াজের ঝাঁজে মরছে গাছ!

পচা পেঁয়াজের ঝাঁঝে মারা যাচ্ছে গাছভারত থেকে আমদানি করা পচা পেঁয়াজ সাতক্ষীরা-ভোমরা মহাসড়কের নবাতকাটি এলাকায় সড়কের পাশে গাছের গোড়ায় ফেলা হচ্ছে। ফলে পচা পেঁয়াজের ঝাঁজে মারা যাচ্ছে মহাসড়কের পাশের গাছ। দীর্ঘদিন ধরে ভোমরার ব্যবসায়ীরা এ কাজ করছে। পচা পেঁয়াজে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি এলাকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

ভোমরা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ভারতের নাসিকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কলকাতা থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করে। ভারতীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় নিম্নমানের পেঁয়াজ বাংলাদেশে পাঠায়। এছাড়াও দুই দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর যোগসাজশে কমিশন ব্যবসার আড়ালে ভোমরা স্থল বন্দরে প্রতিদিন শত শত টন ভারতীয় পঁচা পেঁয়াজ আসছে। আমদানি করা পেঁয়াজ কোনও গুদাম  মালিকের কাছে বিক্রি করতে হয় বা নিজ দায়িত্বে কোনও গুদামে নিতে হয়। অনেকে পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পেরে মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয়।

রাস্তার পাশে ফেলে রাখা পচা পেঁয়াজনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। ভারতে নাসিক থেকে ভোমরা স্থল বন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এগুলো আনা হয়। অনেক সময় ভোমরা বন্দরে বিপরীতে ভারতীয় অংশে সিরিয়াল সমস্যায় ৩/৪ দিন আটকেও থাকে ট্রাকগুলো। সেক্ষেত্রে ভালো পেঁয়াজও প্রায় অর্ধেক পচে যায়। যা ফেলা হয় ভোমরা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের নবাতকাটি এলাকার বিভিন্ন গাছের গোড়ায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভোমরা-শাঁখরা রাস্তার ঘোষ পাড়া পর্যন্ত এবং ভোমরা-সাতক্ষীরা সড়কে বিজিবি বাঁশকল পর্যন্ত কয়েক'শ ছোট-বড় গুদাম রয়েছে। অনেক নারী শ্রমিক এসব গুদামে পচা পেঁয়াজ বাছাইয়ের কাজ করেন। যা রাতের অন্ধকারে ভ্যানে বা ট্রলিতে নিয়ে নবাতকাটি এলাকায় ফেলা হয়। ফলে পচা পেঁয়াজের ঝাঁজে মাটি ও বায়ু দুষণ হয়ে গাছগুলোর আগা শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। এ রাস্তায় শতাধিক গাছ মারা গেছে। আরও কিছু গাছ আছে যা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। এছাড়া নবাতকাটি প্রাইমারি স্কুল থেকে গাংনিয়া ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত পচা পেঁয়াজের গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। চলাচলের সময় সবাইকে নাকে কাপড় ধরে চলতে হয়। অনেকে পচা পেঁয়াজের দুগর্ন্ধে বমি করে ফেলে।

রাস্তার পাশে ফেলে রাখা পচা পেঁয়াজ১৯৯৬ সাল থেকেই ভোমরা স্থল বন্দরের কার্যক্রম শুরু হলেও বন্দরে বর্জ্য-ব্যবস্থাপনার কোনও উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত গ্রহণ করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ ন ম গাউছার রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিটা গাছ মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। মাটি বিষাক্ত হয়ে গেলে গাছের জন্য উপকারী উপাদান ও ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। তখন গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে না পারে না। ফলে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে গাছ মারা যায়।’

তবে এক্ষেত্রে পচা পেঁয়াজ পরিবেশের ওপর কতটা প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি।

রাস্তার পাশে ফেলে রাখা পচা পেঁয়াজস্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পচা পেঁয়াজের ঝাঁজে এই রাস্তা চলাচলা কষ্টকর হয়ে গেছে। এই রাস্তায় চলাচলের সময় অবশ্যই নাক ধরে যেতে হয়। ভারত থেকে আমদানিকৃত পচা পেঁয়াজের কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এবং রাস্তার পাশে থাকা সব গাছ মারা গেছে। পচা পেঁয়াজের কারণে এলাকার অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে এই রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং ভোমরা ইউনিয়ন কাউন্সিল পৃথক বা যৌথভাবে কোনও উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত গ্রহণ করেননি। ভোমরা স্থলবন্দরের আবর্জনা ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব আশেক ই এলাহী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিভিন্ন কারণে এই এলাকার অনেক গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে। গাছ মরার কারণে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ভোমরা-নবাতকাটি এলাকার পচা পেঁয়াজের কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে। আর পচা পেঁয়াজ গাছের গোড়ায় থাকলে গাছ তো মারা যাবে। গাছ মরার কারণে আবহাওয়া জলবায়ুর ওপর প্রভাব পড়বে।

রাস্তার পাশে ফেলে রাখা পচা পেঁয়াজভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার নিয়ামুল হাসান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের পচা পেঁয়াজ ফেলার কারণে গাছ মারা যাচ্ছে এই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। স্থলবন্দর এলাকার আমাদের কোনও কিছু করার অধিকার থাকে না। তারপরও আমাদের সাধ্যমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এটা অবশ্যই পরিবেশ অধিদফতরের কাজ। জেলায় কোনও পরিবেশ অধিদফতরের অফিস নেই। ভোমরা-নবতাকাটি সড়কের পেঁয়াজ ফেলার কারণে গাছ মারা এবং পরিশেষ দূষণ হচ্ছে এটা দুঃখজনক। যাদের কারণে এটা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’