শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুর ২টা ১০ মিনিটে বৃষ্টির মরদেহ পৌঁছায় যশোর শহরের বেজপাড়া মেইনরোডের পাশে বাবা শেখ মোজাহিদুল ইসলামের বাড়ি ‘প্রতীক্ষা’-তে। মরদেহ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে নিহতের আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীদের মধ্যে কান্নার রোল ওঠে। এরপর মরদেহ গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির সামনের উঠানে রাখা হয়। দুপুরে বৃষ্টির মরদেহ পৌঁছানোর পর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মসজিদে প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়।
নিহতের বাবা শেখ মোজাহিদুল ইসলাম এবং শ্বশুর কাজী ইরাদ বলেছেন, অপরিকল্পিতভাবে তৈরি ভবনটির সিঁড়ি মোটে তিন ফুটের। এরকম সরু সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামা সম্ভব নয়। তাছাড়া ইমার্জেন্সি এক্সিট পথগুলো বন্ধ করে দারোয়ানরা আগেই পালিয়ে যায়; সে কারণে রুমে থাকা মানুষজন আর বের হতে পারেনি।
তাদের দাবি, বিল্ডিংয়ের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার কোনও উপায় ছিল না। কেননা ছাদে উঠার দরজাও ছিল বন্ধ।
এরপর থেকে তার সঙ্গে মোবাইলফোনে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। মোবাইলফোন সেট অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। সাদ নূর বলেন, ‘আমার ছোটভাই বৃষ্টির নম্বরে লাগাতার ফোন দিতে থাকে। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফোনকল রিসিভ হয়। ওপাশ থেকে বলা হয়- তিনি ফায়ার সার্ভিসের লোক। সিমের মালিক মারা গেছেন।’
ফায়ার সার্ভিসের ওই ব্যক্তি নূরকে জানান, মৃতার ফোনসেট থেকে সিম বের করে তিনি ফোনকল রিসিভ করেছেন।’
দুই বোনের মধ্যে বৃষ্টি ছিল ছোট। বড়বোন সানজিদা ইসলাম ববিও ঢাকায় বসবাস করেন।
যশোর শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী বৃষ্টি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। মানবসম্পদ বিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কাজ করতেন বনানীর এফআর টাওয়ারের ইইউআর সার্ভিস বিডি লিমিটেডে।
২০১৬ সালে ২৬ মার্চ সহপাঠী যশোরের পুরাতন কসবা এলাকার কাজী সাদ নূরের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কাজী সাদ নূর ঢাকার রিজেন্সি হোটেলের সহ-ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। চাকরির সুবাদে ঢাকার খিলক্ষেতে বসবাস করতেন তারা। মাত্র দু’দিন আগে ২৬ মার্চ তৃতীয় বিয়েবার্ষিকী উদযাপন করেন তারা। বৃষ্টি তার ফেসবুকে স্বামীর সঙ্গে তোলা ছবি দিয়ে হ্যাশট্যাগে লিখেছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ, একসাথে ১০৯৫ দিন, শুভ বিবাহবার্ষিকী, ২৬ মার্চ মিস্টার ও মিসেস নূর- ইত্যাদি। কিন্তু সেই আনন্দঘন মুহূর্ত একদিন পরই স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে।