জানা যায়, আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয়ের পর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা শনিবার (১৮ মে) রাতে দেশে ফেরেন। তিনি এসে জানতে পারেন, কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা বাজারে ধান বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচও উঠাতে পারছেন না। যেখানে এক মণ ধান সরকারিভাবে কেনা হচ্ছে ১ হাজার ৪০ টাকায় সেখানে নড়াইলের হাট-বাজারে কৃষকদের প্রতি ধান বিক্রি করতে হচ্ছে সাড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এ ব্যাপারে গত রবিবার সংসদ সদস্য মাশরাফি জেলা প্রশাসক আনজুমান আরাকে ফোন করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন।
মাশরাফির ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) জামিল আহমেদ সানি বলেন, ‘কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত ধানের যথাযথ মূল্য পান সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার উদ্যোগের কথা বলেছেন মাশরাফি। কৃষকদের বাদ দিয়ে কোনও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান কেনা হচ্ছে এমন খবর বা প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি (মাশরাফি) জানিয়েছেন।’
জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘সংসদ সদস্য মাশরাফি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য বলেছেন। এ ব্যাপারে আমি রবিবার রাতেই জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথা ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে নড়াইলের তিন উপজেলায় মোট ১ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন ধান এবং ৩ হাজার ৯০৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নড়াইল সদর উপজেলায় ৬৬২ মেট্রিক টন ধান এবং ১ হাজার ৭০৪ মেট্রিক টন চাল, লোহাগড়া উপজেলায় ২৬৪ মেট্রিক টন ধান এবং ৯৪৪ মেট্রিক টন চাল এবং কালিয়া উপজেলায় ৫৩৩ মেট্রিক টন ধান এবং ১ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নড়াইল জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরাও চাই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাক। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য উপজেলা ধান-চাল সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কমিটির সভাপতি। কমিটিতে কৃষি কর্মকর্তাসহ কৃষক প্রতিনিধিও সদস্য হিসেবে আছেন। নীতিমালা অনুযায়ী ওই তালিকার কৃষকদের কাছ থেকে দ্রুত ধান কেনা শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী গত ২৫ এপ্রিল থেকে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এটি চলবে চলতি বছরের ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। নড়াইল জেলায় গত ৯ মে থেকে খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত ৫২ জন মিলারের (মিল মালিক) কাছ থেকে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা দরে চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কৃষকদের তালিকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান কেনা শুরু হবে। সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ টাকা।’