লোকসানের শঙ্কায় মেহেরপুরের ধান চাষিরা

মেহেরপুর

আমনের পর বোরো ধানেও মার খেয়ে হতাশ মেহেরপুরের কৃষকরা। ঈদের আগ মুহূর্তে এই ধরনের ক্ষতি তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান চাষ করার পর উৎপাদন খরচ না ওঠায় তারা হতাশ। তবে মেহেরপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলছেন, সরকার তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করেছে।

কৃষকরা বলছেন, কৃষক বাঁচানোর কথা বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবার বোরো সংগ্রহ অভিযানের তারিখ এগিয়ে আনলেও বাস্তবে এর সুফল তারা পাচ্ছেন না।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে সাড়ে ২৪ টাকা। আর প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ পড়েছে ৩৬ টাকা। এই হিসাবে প্রতিমণ ধানের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৯০০ টাকা। অথচ বাজারে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিমণ ধানে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৪০০ টাকা।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড.  আক্তারুজ্জামান জানান, এবার মেহেরপুরের তিন উপজেলায় একুশ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ধান উৎপাদন হয়েছে ৮৭ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার তেরঘরিয়া গ্রামের যুবক আবদুর রহিম (৩০) বলেন, ‘এবার সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে ৮ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের যে দাম, তাতে উৎপাদন খরচই উঠবে না। জমি চাষ, সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক, সেচ ও মাড়াইসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতিমণ ধানের পেছনে আমাদের প্রায় ৯০০ টাকা খরচ হয়েছে। বাজারে প্রতিমণ ধানের দাম ৪৫০-৫০০ টাকা। আমরা এই ক্ষতি কীভাবে পোষাবো?’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড.আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এই সময় ধানের বাজার কিছুটা কম। কৃষক এখন যদি ধান সংরক্ষণ করে রাখতে পারে তবে কয়েকদিন পরেই বেশি দাম পাবে। আর্থিকভাবে দুর্বল কৃষকরা ধার-দেনা করে ধান আবাদ করেন। আর সেই দেনা পরিশোধ করতে গিয়ে তারা ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে খোলা বাজারে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। 

তিনি আরও বলেন, মেহেরপুর জেলার আট হাজার কৃষকের তালিকা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে পাঠানো হয়েছে।

মেহেরপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও  গাংনী  উপজেলার আট হাজার তালিকাভুক্ত কৃষকের কাছ থেকে মান সম্পন্ন ৬৩২  মেট্রিকটন ধান এবং খাদ্য অফিসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ২৫ জন মিলারের কাছ থেকে এক হাজার ৫২৯ মেট্রিকটন সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ১২ মে থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র এক মেট্রিকটন ধান এবং ৩০০ মেট্রিকটন সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে অর্থাৎ এক হাজার ৪০ টাকায় প্রতিমণ ধান ক্রয় করছে।  

আর ৩৬ টাকা দরে অর্থাৎ এক হাজার ৪৪০ টাকা মণ দরে চাল ক্রয় করছে। তালিকাভুক্ত কৃষকের কৃষি কার্ড দেখে তার কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাকে অ্যাকাউন্টে পে-চেকের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে। ফলে মধ্য স্বত্তভোগী বা দালালের তদবিরের কোনও সুযোগ নেই।