স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তিন গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ভিজিএফের এই চাল গত ঈদের আগে বিতরণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর, ২৫ আগস্ট ওই ওয়ার্ডের ৮৩০ পরিবারের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়। গত ২৫ জুলাই উপ-নির্বাচনে বিজয়ী ইউপি সদস্য ইউসূফ আলী সাবেক ইউপি সদস্যের করা ভিজিএফ এর তালিকা নিয়ে আপত্তি জানালে ঈদের আগে চাল বিতরণ বন্ধ করে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)।
স্থানীয়রা জানান, চাল বিতরণ করা তালিকায় নাম রয়েছে নারায়ণপুর গ্রামের মৃত জালাল মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলামের। তিনি নারায়ণপুর বাজারে তিন তলা একটি ভবনের মালিক। সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের নারায়ণপুর শাখা অফিস রয়েছে। এই গ্রামের অন্যতম ধনী ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রুবেল হোসেন এবং জাপান প্রবাসী আছির উদ্দীন মৃধা। এছাড়া মৃত নুর আলী মুন্সির ছেলে সামসুল মুন্সি ও মোবারক সর্দারের ছেলে মনিরুল ইসলামেরও রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। তাদের বাড়িতে চাল উত্তোলনের টোকেন পৌঁছে দেন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য রাবেয়া খাতুন। এ ব্যাপারে জানতে রাবেয়া খাতুনকে কল করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তালিকায় নাম থাকা একাধিক সচ্ছল ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তারা এর আগে কখনও চাল নেননি। অথচ আগের তালিকায়ও তাদের নাম রয়েছে। ২৫ আগস্ট বিতরণ করা চাল কয়েকজন গ্রহণ করলেও তা দরিদ্রদের দিয়ে দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, তালিকায় থাকা নারায়ণপুর গ্রামের মৃত বায়েজিদ সর্দারের ছেলে মোমিনুর রহমান ছয় বছর আগে মারা গেছেন। একই গ্রামের মৃত ওহেদ আলীর ছেলে আব্দুল হালিম দুই বছর আগে মারা যান। তালিকায় তাদের নাম থাকায় গ্রামের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এই গ্রামের বাসিন্দা তুহিনুর রহমান চৌগাছা বাজারে ব্যবসা করেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। তার নামেও রয়েছে ভিজিএফ এর চালের কার্ড। তিনি জানান, তার নাম তালিকায় রয়েছে, এবারই প্রথম জেনেছেন। তিনি এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
একই গ্রামের মিজানুর রহমান, বাবর আলী, আমিনুর রহমান, শাহিনুর রহমান সবাই এলাকায় অর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাদের দাবি, তাদের নামে অন্য কেউ ভিজিএফের এসব চাল উঠিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, ‘স্থানীয় মেম্বারদের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী কার্ড দেওয়া হয়। কার্ড নিয়ে যারা এসেছেন তারা চাল নিয়েছেন। শুনেছি তালিকায় বেশ কয়েকজন সচ্ছল ব্যক্তির নাম রয়েছে। খুব শিগগিরই তালিকা সংশোধন করে সেখানে দরিদ্রদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
যোগাযোগ করা হলে চৌগাছা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিছু সমস্যার কারণে ঈদের আগে ওই ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডে চাল বিতরণ স্থগিত করা হয়। এরপর দুদফায় চাল বিতরণ করা হয়েছে।’ তালিকায় ধনী ও মৃত ব্যক্তিদের নাম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার কানেও এসেছে। ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’