মাছ ধরার আড়ালে খুনের নেশা: ৮ নারীকে হত্যার স্বীকারোক্তি বাবুর

সিরিয়াল কিলার বাবু

নওগাঁয় জন্ম নেওয়া বাবুর জেলে পেশার আড়ালে নেশা ছিল নারী হত্যা আর চুরি করা। তার পুরো নাম আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে বাবু শেখ ওরফে কালু (৪৫)। এ পর্যন্ত সে আট জন নারীকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। তার শিকার এসব নারীর বয়স ছিল ১৩ থেকে ৬০ বছর। তার টার্গেট ছিল মূলত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নারীরা। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যেন সহজেই পার পাওয়া যায়, এমন জায়গায় সে যেতো।

রবিবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে এসব কথা জানান পুলিশের রাজশাহী বিভাগীয় ডিআইজি একেএম হাফিজ আক্তার। এ সময় পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরও জানান, এসব হত্যাকাণ্ডে তাকে আরও চার জন সহযোগিতা করতো। তাদের মধ্যে একজন ছিল স্বর্ণ ব্যবসায়ী। হত্যার পর লুটে নেওয়া স্বর্ণালঙ্কার তার কাছে বিক্রি করতো বাবু। গত ১৯ অক্টোবর নাটোর শহরের রেলস্টেশন এলাকা থেকে বাবুকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ। এর আগে তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে বাবু স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন করছেন পুলিশের রাজশাহী বিভাগীয় ডিআইজি একেএম হাফিজ আক্তার

ডিআইজি জানান, আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে বাবু শেখ ওরফে কালুসহ (৪৫) সব সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাবুর বাড়ি নওগাঁ জেলার রাণীনগর থানার হরিশপুর গ্রামে। তার বাবার নাম জাহের আলী। বাবু শেখের সহযোগীরা হলো রুবেল আলী (২২), আসাদুল (৩৬) ও বাবুর ভায়রা শাহিন (৩৫)। এছাড়া হত্যার পর পাওয়া স্বর্ণালঙ্কার কিনে সহযোগিতা করতো শহরের লালবাজার এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী লিটন খাঁ (৩০)।

পুলিশ সুপার জানান, চুরির করতো বলে বাবু শেখকে তার জন্মস্থান নওগাঁ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে গ্রামবাসী। এরপর থেকে সে তিন সহযোগীকে নিয়ে জেলে সেজে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়, মাছ ধরে আর বিক্রি করে। এরমধ্যে খোঁজ নেয় ওই এলাকায় কোন নারী একা বাড়ি থাকেন। আশপাশে কে কে থাকেন? ওই বাড়িতে কীভাবে যেতে হবে ইত্যাদি। তারা কোন বাড়িতে গিয়ে সহজে চুরি করতে পারবে। তারপর তারা ওই বাড়িতে গিয়ে নারীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যেতো। এরপর তারা অন্য এলাকায় চলে যায়। এমন ঘটনাও ঘটেছে, কোনও নারীকে হত্যার পর তার বাড়িতে কিছুই পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে বাবু এ পর্যন্ত আটটি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। এরমধ্যে নাটোর জেলায় ৫টি, নওগাঁয় ১টি আর টাঙ্গাইল জেলায় ২টি। নাটোর জেলায় ৫টি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন লালপুর উপজেলার চংধুপইল এলাকার সাবিনা পারভীন ওরফে সাহেরা (৩২), বাগাতিপাড়া উপজেলার জয়ন্তীপুরের রেহেনা বেগম (৬০), নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা পূর্বপাড়ার আমেনা বেওয়া (৫৮), খাজুরা মোল্লাপাড়ার স্কুলছাত্রী মরিয়ম খাতুন লাবণী (১৩) ও সিংড়া থানার বিগলবাড়িয়া এলাকার শেফালী বেগম (৫৭)। এছাড়া নওগাঁ জেলার সদর থানায় ২০০৭ সালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডটি তার নেতৃত্বেই হয়েছিল, যার রহস্য ইতোমধ্যে উদঘাটিত হয়েছে। বাবু টাঙ্গাইল জেলার মীর্জাপুর থানার বাঁশতৈল গ্রামের রূপবানু (৪৫) ও একই জেলার সখিপুর থানার তক্তারচালা এলাকার সমলাকে (৬০) হত্যা করেছে। স্কুলছাত্রী মরিয়ম খাতুন লাবণীকে (১৩) হত্যার আগে ধর্ষণ করেছে বলেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে সে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি ও পুলিশ সুপার জানান, গত ৮ অক্টোবর রাতে লালপুরের চংধুপইলে সাবিনাকে হত্যা করে তার স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় বাবু ও তার সহযোগীরা। এরপর বাগাতিপাড়ার জয়ন্তীপুরে রেহেনা বেগমকে হত্যা করে ১৬ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ ১৫ অক্টোবর সিংড়া থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন সন্ধ্যায় লিটন খাঁর দোকান থেকে লালপুরের ঘটনায় চুরি হওয়া স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। আসামি লিটন ও রুবেলের দেওয়া তথ্যমতে পরের দিন নাটোর রেলস্টেশন এলাকা থেকে আসাদুলকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় একই জায়গা থেকে বাবু শেখকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। আরও তথ্য উদঘাটনের জন্য তাদের রিমান্ড আবেদন করা হবে।

এসপি লিটন কুমার সাহা জানান, বাবু শেখ আরও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কিনা তা জানার জন্য তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।