গত ২১-২৩ সেপ্টেম্বর এই মড়কের প্রাদুর্ভাব বেশি ছিল। পরে এর মাত্রা কমতে শুরু করে। এ সময় বাগেরহাট জেলা মৎস্য অধিদফতর ক্ষতিগ্রস্ত ওই তিন উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘের থেকে ৫০টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রে পাঠায়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে চিংড়ি ঘেরগুলোর মড়কের জন্য অক্সিজেন স্বল্পতাকে প্রধান কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই অক্সিজেন স্বল্পতা বৈরী আবহাওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানান বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম।
যদিও এর আগে বাগেরহাট জেলা মৎস্য অধিদফতর প্রাথমিকভাবে তিনটি কারণ উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল। সেই কারণগুলো ছিল- অধিক ঘনত্বে মাছ ছাড়া (শতাংশ প্রতি যে পরিমাণ মাছ চাষ করা যায়, তার থেকে বেশি পরিমাণ মাছ ছাড়া), পানির গভীরতা ঠিক না রাখা ও অতিরিক্ত খাবার দেওয়া এবং বৈরী আবহাওয়া ও হঠাৎ বৃষ্টি।
প্রথম ধাপে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী ছাড়াও বাগেরহাট সদর উপজেলার কিছু অংশে মড়ক দেখা দেয়। সেই সঙ্গে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার ঘেরগুলোতেও এই মড়ক দেখা যায়।
এসব এলাকার চাষিরা ঘেরে বিনিয়োগ করা মূলধন হারিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। মৎস্য চাষিরা সাধারনত ব্যাংক ও এনজিও এমনকি মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছের ঘের করে থাকেন। যা তারা পরিশোধ করেন ঘেরের মাছ বিক্রি করে। বিশেষ করে কম মূলধন তথা ক্ষুদ্র চাষিরা পড়েছেন বেশি বিপাকে।
ফকিরহাট উপজেলার নলধা এলাকার চিংড়ি চাষি আছাদুজ্জামান জানান, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ বৃষ্টিতে চিংড়ি ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় তার ঘেরের গলদা-বাগদা চিংড়ি মরে গেছে। এই মড়ক তাদের সহায় সম্বল কেড়ে নিয়েছে। বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করে সংসার চালান তারা।
চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া বিলের ঘের ব্যবসায়ী মেসার্স জাহিদ ট্রেডার্সের মালিক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৮৫ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করেছিলাম। বাগদা, গলদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছে ঘের ভরা ছিল। কিন্তু গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ বৃষ্টির পর আমার ঘেরে মড়ক দেখা দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা যাওয়া শুরু করে চিংড়ি। এতে আমার ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমি সর্বশান্ত। আমাদের সরকারিভাবে সাহায্য ও ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ফের ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।’
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, ‘জেলার তিন উপজেলার বিপুল পরিমাণ চিংড়ি মারা যাওয়া চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। চাষিদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষের ফলে অনেক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’