দাম বেশি হওয়ায় বেড়েছে পেঁয়াজ চাষ

পেঁয়াজ ক্ষেতযশোরে বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজের চাষ খুব একটা হয় না। বেশিরভাগ গৃহস্থ তাদের সারা বছরের প্রয়োজন মেটাতেই পেঁয়াজ চাষ করেন। তবে এবার সংকটের কারণে যশোরের কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কিছু মাঠে কাঠ পেঁয়াজ (এ জাতের পেঁয়াজের চারা রোপণ করতে হয়) চাষ করা হলেও বেশির ভাগ মাঠ প্রস্তুত করা হচ্ছে ভাতি (বীজ থেকে চারা) পেঁয়াজের জন্য। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ভাতি পেঁয়াজের চারা রোপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি অধিদফতর বলছে, গতবারের চেয়ে এবছর বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গতবছর চাষ হয়েছিল ১২৫০ হেক্টর জমিতে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ১৪৫০ হেক্টর।

পেঁয়াজ চাষ নিয়ে যশোর সদরের চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম ও কেরামত আলীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নূর ইসলাম এ বছর দু’বিঘা জমিতে কাঠ পেঁয়াজ চাষ করেছেন। কার্তিকের প্রথম সপ্তাহে রোপণ করা এ পেঁয়াজ পৌষের শেষের দিকে উঠবে।

পেঁয়াজ ক্ষেততিনি বলেন, গতবার পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এবছর তিনি ৮৫ টাকা কেজি দরে ৯ মণ চারা কিনেছেন। গতবার এই চারার দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা কেজি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামনের সপ্তাহে সেচ দেওয়া হবে। এরপরই পেঁয়াজের কলি (ফুল) আসবে। বিঘা প্রতি ৩৫- ৪০ মণ ফলনের আশা করছেন তিনি। সেক্ষেত্রে পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকার নিচে দাম নামলে কোনও লাভ হবে না।

কেরামত আলী ১০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। সাথী ফসল হিসেবে টমেটো ও পটল। তিনি বলেন,গতবার এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। বিক্রি করার পর দাম সমান সমান হওয়ায় এবার কমিয়ে দিয়েছি। এখন খোরাকের জন্য চাষ করি। যদি পেঁয়াজের ভালো দাম থাকে তাহলে ১০ কাঠা জমিতে ভাতি পেঁয়াজ লাগানোর চেষ্টা করবো। 

যশোর সদরের দেয়াড়া ইউনিয়নের আলমনগর গ্রামের হেলালউদ্দিন বলেন, ‘কাঠ পেঁয়াজ করেছি ৫ কাঠা জমিতে। খাওয়ার জন্যে যতটুকু লাগে রেখে বাকি অংশ বিক্রি করে দেই। লাভ ভালো হলে ভাতি পেঁয়াজ লাগানোর আশা রয়েছে।’

পেঁয়াজ ক্ষেত

বাঘারপাড়া উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে এক কেজি পেঁয়াজের বীজ পেয়েছি। এক বিঘা জমিতে চাষের জন্যে পাতো (বীজতলা) তৈরি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে চারা রোপণ করা হবে। এবার কৃষকরা পেঁয়াজের দাম পাবো।’

বাঘারপাড়া উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আহমদ আলী জানান, এই অঞ্চলে মূলত ভাতি পেঁয়াজের আবাদই বেশি হয়। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কৃষকরা চারা রোপণ করবেন। ১০০ দিন পর তারা পেঁয়াজ তুলতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, দাম বেশি হওয়ায় এবার যশোরের কৃষকরা ভাতি পেঁয়াজ চাষের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। গতবছর ১২৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হলেও এবার ১৪৫০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।