তোতলা মিজান কারাগারে, পাগলা মিজান পলাতক!

মিজানুর রহমান ওরফে তোতলা মিজানআসামির নাম, বাবার নামের একাংশ এবং গ্রামের নামে মিল থাকায় মিজানুর রহমান (৩৮) ওরফে তোতলা মিজানকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার প্রকৃত আসামির নামও মিজানুর রহমান, তবে সে এলাকায় পাগলা মিজান নামে পরিচিত। নামের এই বিভ্রাটে এবং পুলিশের ভুলের কারণে ভুল ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তবে বুধবার (২২ জানুয়ারি) ভুল মিজানুর রহমানকে উপস্থিত করা হলে আদালত তাকে জামিন দেন।

জানা যায়, মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে যশোর কোতোয়ালি পুলিশের এএসআই আল মিরাজ খান শহরতলির সুজলপুর সরদারপাড়া থেকে তোতলা মিজানকে গ্রেফতার করেন। পরে বুধবার সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। তোতলা মিজানের বাবার নাম নূরুল ইসলাম। তিনি মুক্তিযোদ্ধা এবং সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।

অন্যদিকে তোতলা মিজানের বাবার নামের সঙ্গে পাগলা মিজানের বাবার নামের কিছুটা মিল রয়েছে। তার নাম নূরুল হক হাওলাদার। আর পাগলা মিজানের বাড়িও শহরতলির সুজলপুর গ্রামে। তবে পাগলা মিজান বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি সদর উপজেলার সুজলপুর জামতলা আকবর মিয়ার রড ফ্যাক্টরির সামনে খোলাডাঙ্গা গ্রামের সাগর, তাহের, সুজলপুর গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, নাজু, জাহাঙ্গীর, রিপন, রনি ও রবিউলসহ ১০/১২ জন কিছু পোস্টার টানাতে যান। এ সময় সুজলপুর গ্রামের আব্দুস সালাম মিঠু তাদের পোস্টার লাগাতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুস সালাম মিঠুকে লক্ষ্য করে কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করেন তারা। পরে আশপাশের লোকজন এসে সাগর ও তাহেরকে দুটি বোমাসহ পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় আব্দুস সালাম মিঠু আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দুই জনের বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই সোলায়মান আক্কাস। সর্বশেষ মামলাটি তদন্ত করে আট জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন কোতোয়ালি থানার এসআই হায়াৎ মাহমুদ খান। মামলার পর থেকে মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান পলাতক রয়েছেন।

পাগলা মিজানের মা ফকরুন্নেছাপাগলা মিজানের মা ফকরুন্নেছা এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘মিজান গাঁজা খেতো। তিন-চার বছর ধরে সে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঢাকায় থাকে। আমাদের সঙ্গে তার কোনও যোগোযোগ নেই। আমাদের খোঁজ-খবরও সে রাখে না।’

অন্যদিকে মিজানুর রহমান ওরফে তোতলা মিজানের মেজো ভাই আব্দুর রহিম এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘মিজান পেশায় পাইপ মিস্ত্রি। তার বিরুদ্ধে অনেক আগে একটা মামলা ছিল। সেটা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। গত সোমবার সকালে মিজানের প্রথম সন্তান হয়। এদিন সারাদিন সে প্রসূতি ও তার সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল। রাত ৮টার দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরে। পরে মঙ্গলবার ভোররাতে পুলিশ দেয়াল টপকে বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর তারা মিজানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আমরা পুলিশকে মিজানের এনআইডি কার্ড দেখাতে চাই। কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনও কথা শোনেনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই আল মিরাজ খান বলেন, ‘দুই জনের নামের মিল থাকায় ভুল করে এক মিজানের পরিবর্তে আরেক মিজানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার আসামি মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান। তিনি মাদক ব্যবসায়ী, পলাতক রয়েছেন। মিজানুর রহমান ওরফে তোতলা মিজান নির্দোষ। তাকে ভুল করে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ আদালতে তার জামিনের জন্যেও প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।’

মিজানুর রহমানের আইনজীবী রেজিনা ইয়াসমিন বলেন, বিভ্রান্তির কারণে পুলিশ আরেকজন আইনজীবী নিয়োগ করে পিটিশন দাখিল করে আদালতে। আমিও পিটিশন দাখিল করি। পরে আদালত আমার মক্কেলকে জামিন দিয়েছেন।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা খতিয়ে দেখা হয়। এরপর আজই মিজানুর রহমান মামলার প্রকৃত আসামি নন এই মর্মে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। কারাগার থেকে মুক্তির পর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এনে ভুলের বিষয়টি তাকে জানানো হবে। এছাড়া, ভুলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতেও বলা হয়েছে।’