এদিকে সুন্দরবনের প্রাণ প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার আন্তরিক জানিয়ে খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান বলেন, সুন্দরবনে মানুষের অবাধ যাতায়াতের কারণে শব্দ দূষণসহ নানা সমস্যায় স্বাভাবিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি হয়। এ কারণে আগের সাতটি পর্যটন স্পটের ওপর চাপ কমাতে নতুনভাবে আরও চারটি ইকোফ্রেন্ডলি স্পট তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটন স্পটগুলোতেও পর্যটক যাতায়াতের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা প্রয়োজন। কোন স্পটে, কি পরিমাণ পর্যটক যেতে পারবে তা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও বনের সুরক্ষা নিশ্চিতে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, বনকে ঘিরে চলমান পর্যটন কেন্দ্র ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া বন, পরিবেশ ও প্রাণীর জন্য সুখকর নয়। এ প্রক্রিয়াগুলো সুন্দরবন সুরক্ষার জন্য সন্তোষজনকও নয়। পুরো সুন্দরবন নিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল তৈরি, নিয়ন্ত্রিত পর্যটনের বিষয়টি মাথায় নিয়ে কাজ এগোচ্ছে। বন থেকে মৎস্য, কাকড়াসহ সব ধরনের সম্পদ আহরণ বন্ধ করা প্রয়োজন। কাঁকড়া আহরণের ফলে প্রকৃতি পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ পরিবেশগত দিকটি ভাবনায় নিতে হচ্ছে।
সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বনের অভ্যন্তরে সাতটি পর্যটন স্পট রয়েছে। এগুলো হলো করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলা, কলাগাছিয়া ও হিরণ পয়েন্ট-নীলকমল। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন হলো ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের এক হাজার ৮৭৪ দশমিক এক বর্গ কিলোমিটার জলভাগের নদ-নদীতে রয়েছে ২১০ প্রজাতির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও ১ প্রজাতির লবস্টার। সুন্দরবনে সুন্দরিসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল ও মায়া হরিণ, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, লোনা পানির কুমির, কচ্ছপ ও কিং-কোবরাসহ সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। এখানে আছে ৩১৫ প্রজাতির পাখি।
সুন্দরবন ভ্রমণ করা রাজশাহীর আজগর আলী বলেন, এখনও বনের অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। ফলে সুন্দরবনে প্রবেশের পর পর্যটকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে জরুরি চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলেও তা অনেক সময় নিশ্চিত করা যায় না।
এভারগ্রিন ট্যুরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজহারুল ইসলাম কচি জানান, সুন্দরবনে পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও নাজুক। প্রতিটি লঞ্চে মাত্র দু'জন করে বনরক্ষী দেওয়া হয়। বনরক্ষীরা বয়স্ক ও তাদের অস্ত্র চালানোর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। সুন্দরবনের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট। পর্যটকদের আবাসনের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাদের লঞ্চ বা বোটের মধ্যে রাত কাটাতে হয়। কাঠের তৈরি ওয়াচ টাওয়ারগুলোও নড়বড়ে। পর্যটকদের বহনকারী লঞ্চ বেঁধে রাখার মতো ভালো ব্যবস্থাও নেই।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, ২০১১ সালে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প শুরু হয়। তবে এর আওতায় আসলেও সুরক্ষার কোনও কাজ হয়নি। ‘সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব নিয়ন্ত্রিত পর্যটক সুবিধা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প’-এর মাধ্যমে সুরক্ষার কাজ করা হবে।
এদিকে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৯টায় খুলনা মহানগরীর শহীদ হাদিস পার্ক থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে এ শোভাযাত্রা শেষে মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরআগে, ১৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রেস ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকাল তিনটায় উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।