এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে খুলনার নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভরা জোয়ারের সময় কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে। পানির চাপে পাইকগাছা ও কয়রায় বেড়িবাঁধের দুটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা মাটি ফেলে ভাঙন রোধ করেছেন।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুলিয়া সুকায়না বলেন, বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আম্পান আসার আগেই নদীর পানি বেড়েছে। তাই নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে যেকোনও প্রক্রিয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল কুমার সাহা বলেন, মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। কয়রা জুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দার বলেন, যারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করবেন তাদেরকে দু’বেলা খাবার দেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ির ব্যবস্থা করবেন।
খুলনায় ৩৪৯টি নির্দিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপজেলার স্কুল-কলেজ মিলিয়ে ৮১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ লাখ মানুষ অবস্থান নিতে পারবেন। এছাড়া খুলনা সিভিল সার্জন অফিস ৯টি উপজেলায় ১১৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছে।
জানা গেছে, কয়রা উপজেলার কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশী এবং দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের কয়েক জায়গা দিয়ে বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে। স্থানীয় মানুষ বেড়িবাঁধের ওপর মাটি দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করেন।
পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নে বয়ারঝাপায় এলাকায় ওয়াপদা বাধে ভাঙন শুরু হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হক তাৎক্ষণিভাবে লোকজন নিয়ে মাটি ফেলে ভাঙন রোধে কাজ করেন।
চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, বুধবার সকালে ভাঙন দেখা দেওয়ার খবর পেয়ে দ্রুততার সঙ্গে ইউপির আপদকালিন তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে ভাঙন ঠেকাতে মাটি ফেলা হয়।
তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে নানমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হচ্ছে। ১২টা আশ্রয়কেন্দ্রের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ ও সোলাদনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়ে ১৪টি স্থানে ইতোমধ্যে ৬০০ মানুষকে আনা সম্ভব হয়েছে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বর হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে কাটকাটা গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবেশ করে। পরে লোকজন মাটি দিয়ে পানি প্রবেশ আটকায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আম্পান উপকূলে আঘাত হানার আগেই খুলনার নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপকূলীয় উপজেলা পাইকগাছা, দাকোপ এবং কয়রা এলাকায় পানির স্বাভাবিক মাত্রার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পশুর নদীতে পানি প্রবাহের মাত্রা রয়েছে ২.৭৯ মিটার। এ নদীর স্বাভাবিক মাত্রা ২ দশমিক ৪৪ মিটার। আর খুলনা শহরের রূপসা নদীতে প্রবাহিত পানির সীমা রয়েছে ২.৫২ মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধই বেশি নাজুক। জলোচ্ছ্বস না হলে বাঁধ ক্ষতিগুস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। আম্পানের প্রভাবে জোয়ারের সময় নদীতে পানি বাড়ছে।