লিবিয়ায় হত্যাকাণ্ড

পাচারকারী কামালের কাছে ক্ষতিপূরণ চায় নিহত লালচাঁদের পরিবার

গ্রেফতার হাজি কামাললিবিয়ায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির একজন মাগুরার লালচাঁদের পরিবার মানব পাচারকারী হাজী কামালের কাছে কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। হাজী কামাল প্রতারণা করে তাদের সর্বস্বান্ত করেছে বলে অভিযোগ করেন তারা। সোমবার (১ জুন) ভোরে ঢাকার গুলশানের শাহজাদপুর থেকে হাজী কামালকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩।

লালচাঁদের ছোট ভাই নাসিরুল বলেন, ‘ভাই লিবিয়া পৌঁছানোর পর থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কোনও কাজ পায়নি। গত নয় মাস ধরে আমরা সুদের টাকা দিতে দিতে নিঃস্ব। বাকি টাকা কীভাবে দেবো জানি না। আমরা হাজী কামালের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাই।’

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৮ মে) লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১২ জন আহত হন। ১৫ দিন আগে লিবিয়ার বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ত্রিপলিতে নেওয়া হচ্ছিল ৩৮ বাংলাদেশিকে। পথেই তাদের জিম্মি করে সন্ত্রাসীরা। এর মধ্যে ২৬ জনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নিহত লালচাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার  নারায়ণপুর ও আশেপাশের গ্রামের অনেকেই টাইলস মিস্ত্রির কাজ করেন। সেই সূত্রে তারা ঢাকায় কাজ করতে যেত বিভিন্ন মাধ্যমে। ঠিকাদারির সূত্রে অনেকেই হাজী কামালের সঙ্গে কাজ করতো। এলাকার পাঁচ-ছয় জন টাইলস মিস্ত্রিকে প্রায় পাঁচ বছর আগে লিবিয়া পাঠায় হাজী কামাল। লালচাঁদ তাদের সঙ্গে ঢাকায় কয়েক দফা কাজ করলেও বিদেশ যাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি। হাজী কামাল তার দরিদ্র কৃষক বাবাকে ফোনে বিভিন্ন প্রলোভন দেখালে এক সময় তিনি রাজি হয়। ভাগ্য ফেরানোর আশায় নিজের সমন্ত সঞ্চয় দিয়ে, ধারদেনা করে হাজি কামালের চাহিদা অনুযায়ী চার লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন ব্যাংক মারফত। একে একে চারটি বছর চলে গেলেও হাজি সেলিম নানা অজুহাত দেখিয়ে ঘোরাতে থাকে লালচাঁদকে। অবশেষে ৯ মাস আগে লালচাঁদ এবং একই গ্রামের তারিকুল লিবিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। এখানেই শেষ নয়। বিমান দুবাই পৌঁছালে লালচাঁদ পরিবারকে জানায় এখনই হাজী কামালকে আরও দেড় লাখ টাকা না দিলে আমাদের ফেরত আসতে হবে। সেই মূহূর্তে জমি বন্ধক রেখে এবং শেষ সম্বল গরু বিক্রি করে টাকা পাঠাতে বাধ্য হয় তারা।

লালচাঁদের সঙ্গে লিবিয়া যায় তারিকুল নামে ওই গ্রামেরই এক টাইলস মিস্ত্রি। এ ঘটনায় তারিকুল গুলিবিদ্ধ হলেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছে সে সুস্থ আছে। তবে সেও কোনও কাজ পায়নি এখনও।

তারিকুলের দুলাভাই জিনারুল ইসলাম বলেন, ‘হাজী কামাল এই এলাকার অনেককেই টাইলসের কাজ দেওয়ার কথা বলে লিবিয়া পাঠিয়েছে। কিন্তু যাওয়ার পর সে আর দায়িত্ব নেয়নি। সবাই নিজের দায়িত্বে কাজ জুটিয়ে নিয়েছে। সে গ্রেফতার হয়েছে এটা খুব আনন্দের সংবাদ। তবে তারিকুলের পরিবার ধার-দেনা করে তাকে টাকা দিয়েছে। এখন তারা নিঃস্ব। আমরা হাজি কামালের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই। সেই সঙ্গে সরকারের কাছে দাবি, তারিকুল যেন লিবিয়াতে একটা কাজের সুযোগ পায়।’

আরও পড়ুন: 

টাইলস শ্রমিক পাঠানোর আড়ালে মানবপাচার করতেন হাজী কামাল

বেনগাজী থেকে ত্রিপলি যাওয়ার পথে জিম্মি করা হয়েছিল হতভাগ্য বাংলাদেশিদের



বাংলাদেশি অভিবাসী হত্যা: অবিলম্বে খুনিদের শাস্তি চেয়েছে বাংলাদেশ

লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত