দুর্ঘটনায় সড়কে ঝরলো ১১ প্রাণ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাওয়ার পর সেটির ওপরে একটি ট্রাক উঠে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ৯ ব্যক্তি এবং হাসপাতালে আরও দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৫/২০ জন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (‌১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকার আলহাজ আমজেদ আলী পেট্রোল পাম্পের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাতে নিহতদের মধ্যে ৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

বারোবাজার হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মেজবাহ উদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানান, খুলনা থেকে কুষ্টিয়াগামী গড়াই পরিবহনের একটি বাস আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে বারোবাজার তেল পাম্পের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের ওপর উল্টে যায়। ঠিক সে মুহূর্তে বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি ট্রাক ব্রেক কষার চেষ্টা করলেও না পেরে বাসটির মাঝ বরাবর আঘাত হানে। এতে বাসটিরে সামনের ও মাঝের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়।

 

দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া বাস

তিনি জানান, ঘটনাস্থলেই নারী-পুরুষ-শিশুসহ অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহতদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর পথে আরও একজন মারা গেছেন। 

হাইওয়ে থানার ওসি আরও জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রেশমা খাতুন (১৮) নামে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি যশোর থেকে অনার্স পরীক্ষা দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার ডিঙ্গেদা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। বাকিদের পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও যশোর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে লাশ উদ্ধার করে ও রাস্তায় উল্টে যাওয়া বাসটিকে সরিয়ে ফেলে। 

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বাসটির সামনের এবং মাঝামাঝি অংশ দুমড়ে মুচড়ে গেছে। এটি ছিটকে রাস্তার একপাশে পড়ে আছে। আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় করছেন।

দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি পড়ে আচে। সড়কে চলছে উদ্ধার তৎপরতা।

ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক শামীমুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে প্রথম কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে তাদের সঙ্গে যশোর ও ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা যোগ দিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালায়। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থলে ৯ জন মারা গেছেন। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়াও আহত হয়েছেন ১৫ থেকে ২০ জনের মতো। তাদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

এদিকে, দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। কালীগঞ্জ থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের চেষ্টায় কয়েক ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্না রানী সাহাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

যশোরের হাসপাতালে মারা যান আরও একজন

এদিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। তবে তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। তার মৃত্যুতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১১ জনে।

নিহতদের মধ্যে ৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে

এদিকে, দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে আসতে থাকেন। রাত ৮টা পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছেন কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের ইসাহাক আলীর ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান (২২), ভাটপাড়া গ্রামের রনজিত দাসের ছেলে সনাতন দাস (২৫), চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে রেশমা (২৩), আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ গ্রামের জান্নাতুল বিশ্বাসের ছেলে ওয়ালিউল আলম শুভ (২৫), শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া গ্রামের মৃত মহরম বিশ্বাসের ছেলে আব্দুল আজিজ (৭৫)।

বারোবাজার হাইওয়ে থানার এসআই শাহ আলম জানান, ৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের পরিচয় পাওয়ার চেষ্টা চলছে।