চিংড়িঘেরের ভেড়িতে সবজি চাষে বিকল্প আয়

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় আশির দশক থেকেই পানি ও মাটিতে লবণাক্ততার তীব্রতা বাড়তে থাকে। এ কারণে ধানের উৎপাদন কমতে থাকে। জমির মালিকরা ঝুঁকে পড়েন চিংড়ি, বিশেষ করে, বাগদা চাষে। শুরুতে চিংড়ি চাষে লাভবান হলেও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে চিংড়ির উৎপাদন।

এখন চিংড়িঘেরগুলোতে মাছ নেই, নেই ধানের উৎপাদনও। তাই এ অবস্থায় বিকল্প পেশা ও কর্মসংস্থানের উপায় খুঁজতে চিংড়ি ঘেরের ভেড়ি ও পতিত জমিতে মৌসুমি সবজি চাষে আশার আলো দেখছেন অনেকে। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি সবজি বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করছেন চাষিরা। জমিতে ধানও নেই, মাছও নেই– তাই বিকল্প কর্মসংস্থান এবং পেশায় আগ্রহ তাদের।

v-5এদিকে সবজি চাষের এ বিকল্প পেশায় ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে অনেকের। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াসহ ফিরেছে সচ্ছলতাও।

উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের কৃষক মো. মফিজুল ইসলাম জানান, ঘেরের ভেড়িতে মাচা করে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করছেন তিনি। পানির ওপর মাচা করে তাতে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, করলা ও শিম এবং ভেড়িতে ঢেঁড়স, কলা ও পেঁপে চাষ করেন এই কৃষক।

নিজের জমিজমা না থাকলেও অন্যের চিংড়িঘেরের পতিত জমিতে মৌসুমি সবজি চাষ করেন মোংলার কাইলকাবাড়ি গ্রামের কৃষক রজব আলী। বিভিন্ন প্রকারের সবজি আবাদে এ বছর ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ছিলেন তিনি। শুধু লাউ বিক্রি করে এ পর্যন্ত লাখ টাকার বেশি আয় হয়েছে তার। আর যে পরিমাণ সবজি চাষ হয়েছে তাতে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক ঘের ব্যবসায়ী এখন মাছের পাশাপাশি সবজি চাষে ঝুঁকছেন।

তবে এসব কৃষকের অভিযোগ, মৌসুমি এ সবজি চাষে কৃষি বিভাগের নজরদারি ও সহযোগিতা নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ বালা কৃষকদের অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘মাছের ঘেরে মাচা করে সবজি চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর এ ক্ষেত্রে কৃষকদের নানারকম পরামর্শসহ উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

তিনি জানান, এ বছর ২শ’ হেক্টর জমিতে মৌসুমি সবজি চাষ হয়েছে। এ খাতে কৃষকদের কীভাবে সরকারি সহায়তা দেওয়া যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।