অস্ত্রের মুখে ঘেরের মাছ ছিনতাইয়ের অভিযোগ

যশোরের মনিরামপুরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি ঘের থেকে ৫টি নৌকাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মাছ ছিনতাইয়ের অভিযোগ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে ২৫-৩০ জনের একদল দুর্বৃত্ত ঘেরমালিক বলরাম রায় ও কর্মচারী সঞ্জিত কুমারকে মারপিট করে মাছ ছিনতাই করে। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে মনিরামপুর উপজেলার হাজিরহাট বাজারে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ঘেরমালিক বলরাম রায়। ওই সময় হরিদাসকাটি ইউপি চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়েসহ ঘেরের জমির মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলরাম রায় জানান, ১০ বছরের চুক্তিতে ৪৭২ জনের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে কেশবপুরের আব্দুস সামাদের সঙ্গে অংশীদারী ভিত্তিতে বিলবোকড়ে মাছের ঘের করেন তিনি। কিন্তু চুক্তি মোতাবেক গত ৭ বছর ঘেরে মাছের চাষ করে কোনও ভাগ দেওয়া হয়নি তাকে। বিষয়টি জমির মালিকরা জানতে পেরে আব্দুস সামাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায় গত বছর বাকি ৩ বছরের জন্য বলরাম রায়ের নামে ঘেরের চুক্তিনামা (ডিড) করে দেন আব্দুস সামাদ। সেই মোতাবেক জমিদাতাদের লিজের বকেয়া পাওনা বুঝে দেন বলরাম। আগামী মাসের ৫ তারিখে এ বছরের লিজের টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ জন্য তিনি বৃহস্পতিবার ঘেরের মাছ ধরান। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে উপজেলার পোড়াডাঙ্গা গ্রামের মানিক দত্তের ছেলে বৈদ্যনাথ, কুচলিয়া গ্রামের গৌর মল্লিকের ছেলে গোবিন্দ মল্লিক, বালিদাহ গ্রামের আনিছুর রহমান ও অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ছেলে অশোক বিশ্বাসসহ ২৫-৩০ জন ঘেরে যান। তারা বলরাম রায় ও তার কর্মচারী সঞ্জিত কুমারকে মারপিট করে অস্ত্রের মুখে ৫টি নৌকাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মাছ ছিনিয়ে নিয়ে যান।

বলরাম রায় জানান, এ ঘটনায় তিনি মনিরামপুর থানায় মামলা করেছেন। জড়িতদের আটকের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে বলেন, ‘আমি ঘেরের জমির মালিকদের লিজের টাকার জামিন্দার হই। ইতোমধ্যে বকেয়া পাওনা তার মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। এ বছরের টাকা দেওয়ার আগেই প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’ তিনিও জড়িতদের আটকের পাশাপাশি সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

উপস্থিত রামপদ রায়, অনিমেষ মল্লিক, উজ্জ্বল বিশ্বাস, উপেন্দ্রনাথ রায়সহ একাধিক জমির জমি মালিক জানান, তারা বলরামকে দেখেই জমি লিজ দিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে বিগত বছরের বকেয়া টাকাও তারা বুঝে পেয়েছেন। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল মাছ ছিনতাই করে তাকে পথে বসানোর চেষ্টায় লিপ্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরামপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সোয়েব হোসেন জানান, ঘের নিয়ে দ্বন্দ্বে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় ঘটনাস্থলে গিয়ে সেটি প্রশমন করা হয়েছে। আগামী ২ মার্চ উভয়পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।

এছাড়া খবর পেয়ে মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ঘের নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। এরপর তিনি উভয়পক্ষকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অনুরোধ করেন এবং বিবদমান দুই পক্ষের কথা শোনার জন্য আগামী ২ মার্চ সকাল ১০টায় ঘেরের বৈধ কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা পরিষদ হলরুমে আসতে বলেছেন। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।