অপহরণের পর ছাত্রীকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে: প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার

হিন্দু সম্প্রদায়ের এক অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করার অভিযোগে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নূরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানাধীন কৈয়া গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ভিকটিমকেও উদ্ধার করা হয়েছে।

ওই ছাত্রীর বাবা জানান, ২০১৯ সালে তার মেয়ে এসএসসি পাশ করে। বর্তমানে স্থানীয় একটি কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সে। মেয়ে দক্ষিণ হাজীপুরে এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতো। পথিমধ্যে নূরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যারয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ (৪৮) তাকে উত্ত্যক্ত করতো। জন্ম সনদ অনুযায়ী, ২০০৪ সালের পহেলা ডিসেম্বর মেয়ের জন্ম। গত ২ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে প্রাইভেট পড়তে বেরিয়ে দুপুরের পরও বাড়ি ফেরে না সে। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পাওয়ায় পরদিন শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা। ৭ এপ্রিল তার মেয়ে খুলনার এক নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে বসে ধর্মান্তরিত হচ্ছে এবং প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদের সঙ্গে বিয়ে সংক্রান্ত এক ননজুডিশিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর করছে- এমন ছবি ফেইসবুকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তাকে জানান। একপর্যায়ে ৭ এপ্রিল তিনি শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে থানায় মেয়েকে অপহরণ ও ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। পরদিন তার মেয়েকে উদ্ধার ও প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতারের দাবিতে আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। ১০ এপ্রিল শামীম আহমেদকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। শামীম আহম্মেদ ইতোপূর্বে তিনটি বিয়ে করেছেন বলে তারা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছেন।

কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম মোহাইমেনুর রশিদ শুক্রবার বিকাল ৪টায় শ্যামনগর থানায় এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুক্রবার দুপুর একটার দিকে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানাধীন কৈয়া বাজারের পার্শ্ববর্তী এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদকে গ্রেফতার ও ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। শামীম আহম্মেদকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার আদালতে পাঠানো হবে। একই দিনে ভিকটিমকে ২২ ধারার জবানবন্দি দিতে আদলতে এবং ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে।

শুক্রবার কালীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এসএম মোহাইমিনুর রশিদ পিপিএম সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে গত ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে শ্যামনগরের নূরনগর এলাকা থেকে ওই ছাত্রী অপহরণ হয়। একাদশ শ্রেণিতে পুড়য়া ওই ছাত্রীর পিতা ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তার মেয়ের অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ৯ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদকে আসামি করে মামলা করে। একপর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে শুক্রবার অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রীকে উদ্ধারসহ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।