লবণাক্ত জমিতেও হাসছে বোরোর শীষ

বাগেরহাটের মোংলা ও রামপাল। দুটো উপজেলাই লবণ অধ্যুষিত। আবাদ করার মতো জমি নেই বললেই চলে। তারপরও বিলের জমি শুকিয়ে এলে তাতে লবণ সহিষ্ণু জাতের ধান আবাদের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় কৃষি অধিদফতর। সরেজমিনে দেখা গেলো, তীব্র লবণাক্ততার মাঝেও বোরোর আবাদ হয়েছে বেশ। সফলতার মুখ দেখলো কৃষকদের প্রশিক্ষণ।

মোংলা ও রামপালে সারাবছরই মাছচাষ হয়। ধানের আবাদ হয় না বললেই চলে। কিন্তু নভেম্বরে বিলের জমি শুকিয়ে এলে কিছু এলাকায় লবণ-সহিষ্ণু জাতের ধান আবাদের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় কৃষি অধিদফতর। এ নিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। তাতেই মিলেছে সফলতা। লবণ সহিষ্ণু জাত চেনানো, উন্নত বীজ প্রদান, সঠিক বীজ নির্বাচন, সেচ ব্যবস্থা তৈরি; এসবের ফলেই আলোর মুখ দেখছে বোরোর আবাদ। কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

মোংলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ বালা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এবার মোংলা উপজেলায় পাঁচ হেক্টর লবণাক্ত জমিতে হাইব্রিড (হীরা-২) ও উফশী (ব্রি -৮১) আবাদ হয়েছে। পৌরসভার মধ্যে এক হেক্টর এবং উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নে তিন হেক্টর ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে ১৫০ শতক জমিতে উৎপাদিত হয়েছে এই ধান। গত ডিসেম্বরে বীজতলা শুরু করা এই ধান এপ্রিলের শেষে কাটা হবে বলে জানান তিনি।

রামপাল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী মন্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৫৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৩৩৫ হেক্টরে। গৌরম্ভা ইউনিয়নে হাইব্রিড জাত চাষ হয়েছে ৪৪৫ হেক্টরে, উফশী ৮৫ হেক্টরে, উজলকুড় ইউনিয়নে হাইব্রিড ২ হাজার ১০৫ ও উফশী ২৬০ হেক্টর, বাইনতলা ইউনিয়নে হাইব্রিড ৭৬০, উফশী ১৮০ ও স্থানীয় জাত ৫ হেক্টরে চাষ হয়েছে।

এছাড়া রামপাল সদর ইউনিয়নে হাইব্রিড ২৪০ ও উফশী ১৬৫ হেক্টর, রাজনগর ইউনিয়নে হাইব্রিড ৩৭ ও উফশী ১১ হেক্টর, হুড়কা ইউনিয়নে হাইব্রিড ৩ হেক্টর, পেড়িখালী ইউনিয়নে হাইব্রিড ১ ও উফশী ১ হেক্টর, মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নে হাইব্রিড ২৮ ও উফশী ৬ হেক্টর এবং বাঁশতলী ইউনিয়নে হাইব্রিড ১ ও উফশী ২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক হাওলাদার মারফুল হক, মকবুল হোসেন, হাফিজুর রহমান ও আনসার আলীসহ অনেকেই বলেন, কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শে লবণ এলাকাতেও ধানের এতো আবাদ সম্ভব হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ বালা ও কৃষ্ণা রানী মন্ডল জানান, পুনর্বাসনের প্রণোদনা মাধ্যমে রামপালে ১ হাজার ৩৭০ জন এবং মোংলায় ১৫০ জন কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এসব কৃষকদের কৃষি বিভাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।