এখনও পুড়ছে সুন্দরবন

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারনী এলাকার বনে লাগা আগুন প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার (৪ মে) বিকালে নিয়ন্ত্রণের দাবি করা হলেও বুধবার (৫ মে) দিনভর জ্বলছে এই ম্যানগ্রোভ বনের গাছপালা ও লতাগুল্ম। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বৃহস্পতিবারের মধ্যে সুন্দরবনে লাগা এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক  গোলাম সরোয়ার।

সোমবার (৩ মে) সকাল ১১টায় সুন্দরবনের দাসের ভারনী এলাকার বনে আগুন লাগে। মঙ্গলবার (৪ মে) বিকালে ৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণের কথা বলে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের ৩ ইউনিট সন্ধ্যায় সুন্দরবন থেকে চলে আসে। তবে বুধবার (৫ মে) ভোর থেকে একইস্থানে ফায়ার লাইনের মধ্যে ধোয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে আবারও গাছপালা ও লতাগুল্মে দাউ-দাউ করে ফের আগুন জ্বলতে থাকে। খবর পেয়ে সকালে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের শরণখোলা ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। এরপর মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের আরও ফায়ার সার্ভিসের আরও দুটি ইউনিট সুন্দরবনে আগুন নিভানোর কাজে যোগ দেয়।

লোকালয় থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার গহীন বনের দাসের ভারানী এলাকায় সোমবার সকাল ১১টায় প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক মো. সরোয়ার হোসেন জানান, সোমবার সকাল ১১টায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয় শরণখোলা রেঞ্জের দাশের ভারনী টহল ফাঁড়ি এলাকার বনে আগুন লেগেছে। প্রথমে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ ও বিকালে বাগেরহাটের ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটসহ বন বিভাগ ও সুন্দরবন সুরক্ষা ভিটিআরসি টিমের সদস্যরা সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুর্গম বনের ভিতর ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপ টেনেও ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি।

সরোয়ার হোসেন বলেন, এরপর রাতের কারণে আগুন নেভানোর পাইপ টানার কাজ বন্ধ করে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় লোকালয় থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ অন্যরা। আগুন লাগার জায়গাটা বেশ দুর্গম বনের মধ্যে হওয়ায় ও পানি বেশ খানিক দূরে থাকায় আমাদের কর্মীরা পানির পাইপ টানার কাজ শেষ করে আগুন নেভানো শুরু করেছে। প্রায় পাঁচ একর এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার বিকালে দু-দফা বৃষ্টির কারণে ছড়িয়ে পড়া আগুনের তেজ কমে আসলে আগুন প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসের ৩ ইউনিটসহ সুন্দরবন থেকে চলে আসে। সকালে ওই অগ্নিকাণ্ডের স্থানে ফায়ার লাইনের মধ্যে ধোয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে আবারও গাছপালা ও লতাগুল্মে দাউ-দাউ করে ফের আগুন জ্বলতে থাকার খবর পেয়ে বুধবার (৫ মে) সকালে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের শরণখোলা ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে।

এরপর মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের আরও ফায়ার সার্ভিসের আরও দুটি ইউনিট সুন্দরবনে আগুন নিভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। স্থানটি দুর্গম হওয়ায় তৃতীয় দিনে এসেও আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন আবারও যাতে বনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য কাটা হয় ফায়ার লাইন। আলো স্বল্পতায় ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও পরে তা পারেনি।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদীন তৃতীয় দিনেও শরণখোলা রেঞ্জ দাসের ভারনী এলাকার বনে জ্বলতে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাটের আরও ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটসহ বন বিভাগ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় ভিটিআরসি টিমের সদস্যরা সুন্দরবনে আগুন নিভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।