মৃত্যুর পর করোনা ইউনিটের মেঝেতেই লাশ পড়েছিলো ১৪ ঘণ্টা

নড়াইল সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মেঝেতে ১৪ ঘণ্টা ধরে পড়ে ছিলো একটি লাশ। এ সময়ে কোনও স্বজন খোঁজও নিতে আসেনি কিংবা হাসপাতালের কেউ এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগও নেয়নি।

মৃত ওই ব্যক্তির নাম খন্দকার মিজানুর রহমান (৫২)। তিনি নড়াইল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কসবা-মাজাইল গ্রামের খন্দকার নূরুল ইসলামের ছেলে তিনি।

বুধবার (২৩ জুন) রাত ১টার দিকে হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হলেও বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে স্বজনরা লাশটি গ্রহণ করে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স বাসনা সাহা।

হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে চিকিৎসারত রোগীদের স্বজনরা জানান, ১৪ ঘণ্টা ধরে লাশ মেঝেতে পড়ে থাকায় আশপাশের রোগীদের মধ্যে মানসিক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ হাসপাতালে ৩০ শয্যার করোনা ইউনিটের সবকটিতেই আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি আছেন। এর মাঝখানে মেঝেতে ওই লাশটি পড়ে ছিলো। সরানোর আগ পর্যন্ত একটি সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। পেট ফুলে যাওয়া লাশটি ঘিরে মাছিও উড়তে দেখা গেছে।

লাশটি পড়ে থাকা স্থানের পাশের শয্যায় রয়েছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগী আজাদুর রহমান। তার ছেলে ফজলে রাফি জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে কয়েকজন লোক তাকে (মিজানুর রহমান) এ ইউনিটে নিয়ে আসেন। এর তিন ঘণ্টা পর রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ হাসপাতালের নার্স হেনা পারভীনের বাসায় তিনি ভাড়া থাকতেন। হেনা পারভীন বলেন, ৪-৫ মাস আগে থেকে তিনি আমার বাসার নিচতলায় একা ভাড়া আছেন। বিয়ে করেননি। বুধবার সন্ধ্যায় খবর পাই তিনি অসুস্থ। এরপর তার খোঁজখবর নেই। রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করাই। রাত ১টার দিকে তিনি মারা যান।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মশিউর রহমান বলেন, মৃত ব্যক্তির বাড়ি দূরে হওয়ায় লাশ হস্তান্তরে কিছুটা সময় লেগেছে। স্বেচ্ছাসেবীরা গোসল করানোর পর তার স্বজনরা এসে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাশ নিয়ে গেছে।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তুহিন কান্তি ঘোষ বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে খন্দকার মিজানুর রহমানকে ভর্তির তিন ঘণ্টা পর তিনি মারা যান। স্বজনরা আসার পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাদের কাছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।