করোনায় মৃত্যু, পশু কেনা হলেও হলো না কোরবানি

ঈদুল আজহার আগের দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে মারা যান করোনায় আক্রান্ত স্কুলশিক্ষক মো. আক্তারুজ্জামান সুমন (৪৯)। তিনি খুলনার সরকারি করোনেশন গার্লস স্কুলের ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক। খুলনা মহানগরীর মিয়া পাড়ায় তার বাড়ি। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপা থানার নিশ্চিন্তপুর। খুলনা ও ঝিনাইদহে তার রয়েছে আপন আরও ছয় ভাই। প্রতিটি পরিবারেই ছিল কোরবানির প্রস্তুতি। কোরবানির পশুও কেনা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষক আক্তারুজ্জামানের মৃত্যুতে তার আত্মীয়-স্বজনদের ২০টি পরিবারের ছিল না ঈদের আনন্দ, হয়নি কোরবানি।

২০ জুলাই সন্ধ্যায় স্কুলশিক্ষকের মৃত্যুর পর ২১ জুলাই নগরীর পশ্চিম বানিয়াখামার বড় মসজিদে ঈদের নামাজ শেষে তার প্রথম জানাজা হয়। এরপর পরিবারের লোকজন তার মরদেহ নিয়ে ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে রওনা হন। দুপুরে সেখানে পৌঁছানোর পর বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় তার।

আক্তারুজ্জামান সুমন খুলনার স্থানীয় দৈনিক সময়ের খবরের সম্পাদক ও সময় টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি তরিকুল ইসলামের ছোট ভগ্নিপতি। 

তরিকুল ইসলাম বলেন, সুমন করোনেশন স্কুলের জনপ্রিয় ইংরেজি টিচার ছিলেন। স্কুলে তিনি জামান স্যার নামে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি প্রায় ১০দিন প্রচণ্ড শ্বাসকস্টে ভুগছিলেন। করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর গত ১৮ জুলাই তাকে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২০ জুলাই সকালে তাকে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মারা যান। 

তিনি আরও জানান, সুমনের মৃত্যুতে তার পরিবারে ছিল না ঈদের আনন্দ। সুমনের ছয় ভাই ও নিকট স্বজন মিলিয়ে ২০টি পরিবার কোরবানিও দেয়নি। কিন্তু প্রতিটি পরিবারই কোরবানির পশু কিনেছিল। সুমনের ভাইয়ের নাতির আকিকার জন্যও পশু কেনা ছিল। আকিকাও দেওয়া হয়নি। প্রতিটি পরিবারই শোকে মুহ্যমান। 

করোনায় প্রাণ যাওয়া হাজারো মানুষের পরিবারে একই চিত্র। প্রিয়জন হারিয়ে নিরানন্দের ঈদ কেটেছে তাদের।