পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৩ হাজার খামারি কোরবানির পশুকে বাজারজাতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ বছর চাহিদা অনুযায়ী খামারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোরবানি পশু প্রস্তুত থাকায় জেলায় এবার কোনও সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। তবে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা বলছেন, সীমান্ত পথে ভারতীয় গরুর আধিক্য ঠেকানো গেলে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন।
বুধবার (২১ মে) সরেজমিনে একাধিক খামার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসম্মত মোটাতাজা করার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন খামারিরা। ইতিমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের বড় ও মাঝারি আকারের খামারগুলোতে উন্নত জাতের কোরবানি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে শাহিওয়াল, ফাইটার, নেপালি গির, রাজস্থানী, ওয়েস্টার্ন ফ্রিজিয়ান, উরবারী ষাঁড় ও মহিষসহ বিভিন্ন জাতের গবাদি পশু রয়েছে। এ ছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের ছোট খামারগুলোতে গরুর পাশাপাশি ছাগল ও ভেড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউ প্রিন্স ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন বলেন, আমার খামারে শাহিওয়াল, ফাইটার, নেপালি গির, রাজস্থানী, ওয়েস্টার্ন ফ্রিজিয়ান, উরবারী ষাঁড়, গইয়াল ও মহিষসহ বিভিন্ন জাতের গরু এখানে আছে। প্রতিটি গরুতে প্রতি মাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে আমাদের আবেদন থাকবে ইন্ডিয়ান গরু প্রবেশ যেন এ বছর বন্ধ রাখা হয়। অন্যথায় খামারিদের যদি এ বছরও লোকসান হয়, তাহলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না।
শহরের ছয়বাড়ীয়া এলাকার প্রিন্স ডেইরি ফার্মের সুজন মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত খামারিদের অবস্থা ভাল রয়েছে। আমার এই ফার্মে প্রায় দুই শতাধিক গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে শাহিওয়াল, ফাইটার, নেপালি গির, রাজস্থানী, ওয়েস্টার্ন ফ্রিজিয়ান, উরবারী ষাঁড় ও মহিষসহ বিভিন্ন জাতের গবাদি পশু রয়েছে। এখন যদি বর্ডার দিয়ে গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে খামারিরা কিছুটা লাভবান হবো।
শরীফ ভান্ডারী নামে আরেক খামারি বলেন, খামারে থাকা পশুগুলোকে নিয়মিত কাঁচা ঘাসের পাশাপাশি খৈল, ভুসি, খড়, ডালের ভুসিসহ প্রাকৃতিক খাবার দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার। তবে খামারগুলোতে চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ গরু, ১২ হাজার ১৬৬টি মহিষ, ১৫ হাজার ৩২১টি ছাগল ও ৮ হাজার ৫৮১টি ভেড়া রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকালে জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলায়ও পশু সরবরাহ করা যাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, এ বছর সরকারিভাবে ১২১টি হাটকে ইজারার মাধ্যমে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কে এবং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাট না বসানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তবে পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক কোরবানি হাটের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।