ধর্ষণ-হত্যার ১৮ বছর পর ফাঁসি, তবুও সন্তোষ

দুই নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার ১৮ বছর পর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মিন্টু ওরফে কালু ও আজিজ ওরফে আজিজুলের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে তাদেরকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। দীর্ঘ এত বছর আসামিদের শাস্তি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ধর্ষণ-হত্যার শিকার নারীদের স্বজনরা।

মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী কমলা খাতুনের মেয়ে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর হলেও দোষীদের শাস্তি হওয়ায় আমরা খুশি। মামলার রায়ে দীর্ঘদিন পার হয়েছে। তবুও এতদিন পর ন্যায়বিচার পেয়ে আমরা কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি।’

এদিকে ফাঁসির পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতেই দুই জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে কারা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকালে নিজ বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তাদেরকে পাশাপাশি দাফন করেছে স্বজনরা।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জনের ফাঁসি কার্যকরের জন্য কয়েক দিন ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তাদের স্বজনরা গত শনিবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে শেষবারের মতো দেখা করেন। দুই পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে তাদের দেখা করানো হয়।

চুয়াডাঙ্গা আদালত সূত্র ও মামলার বিবরণীতে জানা যায়, আলমডাঙ্গা থানার জোড়গাছা হাজিরপাড়া গ্রামের কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তাদের ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওই দুই নারীর গলাকাটা হয়।

এ ঘটনায় এক নারীর মেয়ে বাদী হয়ে পরদিন আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই জনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুই জন হলেন-একই গ্রামের সুজন ও মহি।

মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মহি মারা যান। ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই এই মামলায় চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুজন, আজিজ ও কালুকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর আসামি পক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় বহাল রাখে।

২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখে এবং অপর আসামি সুজনকে খালাস দেয়। ২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান খালাসপ্রাপ্ত সুজন। পরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আজিজ ও কালু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান। সেই আবেদন পরে নাকচ হয়ে যায়।