এবছর মোংলায় ৫ নৌযানডুবি, একটিরও ছিল না সার্ভে সনদ

সার্ভে সনদ নেই। তবু মোংলা বন্দরের পশুর নদীর চ্যানেলে অবৈধভাবে পণ্য পরিবহন করে চলছে শত শত নৌযান। অবৈধভাবে চলা এসব নৌযানের সংখ্যা কত, তা জানা নেই বিআইডব্লিউটিএ কিংবা বন্দর কর্তৃপক্ষের।

এসব নৌযান মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হয়। সর্বশেষ সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাতে চ্যানেলের হারবাড়িয়া এলাকায় বিদেশি জাহাজ হ্যান্ডিপার্কের ধাক্কায় ডুবে গেছে কয়লাবোঝাই একটি বাল্কহেড। এ নিয়ে চলতি বছরের ১১ মাসে পাঁচটি নৌযানডুবির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটিরও সার্ভে সনদ ছিল না।

বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ও সচিব কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সোমবার রাতে ডুবে যাওয়া ফারদিন-১ বাল্কহেডের সার্ভে সনদ ছিল না। সেই সঙ্গে আমদানি হওয়া পণ্য পরিবহনের অনুমতি ছিল না। বাল্কহেডটি ১৫ দিনের মধ্যে নদী থেকে তুলতে মালিককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বন্দরের নিরাপদ নৌ-চ্যানেলের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগেও চারটি নৌযান ডুবেছিল। সেগুলোরও সার্ভে সনদ ছিল না। তবে আগের চারটি নদী থেকে তোলা হয়েছে।

চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার বাসিন্দা এমভি ফারদিন-১ বাল্কহেডের মালিক ফজলুল হক খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইতোমধ্যে বাল্কহেডটি তুলতে কাজ শুরু করেছি। ১৫ দিন লাগবে না। এক সপ্তাহের মধ্যে বাল্কহেডটি তুলতে পারবো।

খোকন বলেন, বাল্কহেডটি মো. মানিককে ভাড়া দিয়েছিলাম। এটি বালু টানার কাজে ব্যবহার হতো। কীভাবে কয়লাবোঝাই হলো তা আমি বুঝতে পারছি না।

হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বলেন, মোংলা বন্দর চ্যানেলে চলতি বছর পাঁচটি নৌযান ডুবেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ৭৫০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এমভি বিবি-১১৪৮, ৩০ মার্চ ৫১০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এমভি ইফসিয়া মাহিন, ৮ অক্টোবর ১৪০০ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে এমভি বিউটি অব লোহাগড়া-২, একই দিনে ৮৫২ মেট্রিক টন সার নিয়ে এমভি দেশবন্ধু এবং সর্বশেষ ৩৭০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ফারদিন-১ বাল্কহেড ডুবে যায়।

এসব বিষয়ে নৌ-পরিবহন অধিদফতরের পরিচালক (ঢাকা) মো. বদরুল হাসান লিটন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পণ্য পরিবহনের জন্য বিভিন্ন নৌযানের সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন সনদ আমরা দিই। কিন্তু যেসব নৌযান সার্ভে সনদ না নিয়ে নদীতে চলাচল করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার দায়িত্ব শুধু আমাদের একার নয়। পুলিশ, কোস্টগার্ড, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিআইডব্লিউটিএ অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে মেরিন কোর্টে মামলা দেবে। সার্ভে সনদ না থাকা নৌযানের বিরুদ্ধে ৩৩ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু এসব সংস্থার দায়িত্বে অবহেলা আছে কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি বদরুল হাসান।

বাল্কহেড ডুবি

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক (খুলনা) মো. আশরাফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নৌ-পরিবহন অধিদফতরের পরিচালক যা বলেছেন, তা সত্য নয়। অবৈধভাবে নদীতে চলাচলকারী নৌযানের বিরুদ্ধে তারাই ব্যবস্থা নেবেন। আমাদের দায়িত্ব হলো নদীতে নৌযান ও পাইলটের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা। এর বেশি আমাদের দায়িত্ব নেই।

এদিকে, সোমবার রাতে কয়লাবাহী বাল্কহেডডুবির ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের সহকারী হারবার মাস্টার আমিনুর রহমানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সিনিয়র পাইলট রিয়াজুর রহমান ও নির্বাহী প্রকৌশলী (নৌ-নির্মাণ) অনুপ চক্রবর্ত্তী। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়ার-৯ নম্বর বয়া এলাকার পশুর নদীতে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিদেশি জাহাজ এমভি এলিনা বি-১ থেকে কয়লাবোঝাই করে ঢাকায় যাচ্ছিল ফারদিন-১ বাল্কহেডটি। বন্দর ত্যাগের সময় বিদেশি এমভি হ্যান্ডিপার্কের ধাক্কায় ফারদিন ডুবে যায়। এতে পাঁচ জন নিখোঁজ হন। এর মধ্যে দুজনের লাশ উদ্ধার হলেও তিন জন নিখোঁজ রয়েছেন।