খুমেকে কিডনি বিভাগ চালু, ২ জন পেলেন ফ্রি চিকিৎসা

কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হয় নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। এ অবস্থায় গত ১৪ ডিসেম্বর খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগ চালু হয়েছে। এখানে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ জন কিডনি রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুই জন কিডনি রোগীর বায়োপসি পরীক্ষা ফ্রি করা হয়েছে। ডায়ালাইসিস (ক্যাথেটার) নিয়মিতভাবে রোগীদের ফ্রি করানো হচ্ছে। কিডনি রোগীদের বায়োপসি করতে ব্যয় হয় ২৫ হাজার টাকা। ডায়ালাইসিসে খরচ পড়ে ১৫ হাজার টাকা। হাসপাতালে এই চিকিৎসাসেবা ফ্রি পাচ্ছেন রোগীরা।

খুমেক হাসপাতালে কিডনি বিভাগে গত কয়েকদিন ধরে হাদিউজ্জামান (১৭) নামে এক কিশোর চিকিৎসাধীন। ১ জানুয়ারি তার কিডনির বায়োপসি করানো হয়। তার বাবা লিয়াকত হোসেন দিনমজুর। হাসপাতালে ছেলের ফ্রি চিকিৎসা পেয়ে খুশি লিয়াকত।

একই দিনে প্রকাশ রায় (১৮) নামে আরও এক যুবকের বায়োপসি ফ্রি করানো হয়েছে। প্রকাশ রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। এক মাস ধরে হাসপাতালে কিডনিজনিত সমস্যার কারণে চিকিৎসাধীন। তিনি ঝিনাইদহ জেলার বাসিন্দা। প্রকাশের বাবা সুবল কুমার শীল ক্যানসারে আক্রান্ত। বর্তমানে তার বাবা চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছেন।

হাদিউজ্জামানের মা বলেন, বাইরে থেকে বায়োপসি করতে ২৫ হাজার টাকা লাগতো। যা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। কিন্তু এই হাসপাতাল আমার ছেলের কিডনি বায়োপসি ফ্রি করেছে। আমি অনেক খুশি।

খুমেকের কিডনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে কিডনি বিভাগ চালুর পর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ জন কিডনি রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি বিনা খরচে দুই জন কিডনি রোগীর বায়োপসি করানো হয়। কিডনি বিভাগে সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. সিদ্ধার্থ বাওয়ালী, সহকারী অধ্যাপক (নেফ্রোলজি) ডা. পলাশ তরফদার ও রেজিস্ট্রার ডা. মিঠুন দেবনাথ দায়িত্বপালন করছেন।

গত ১৪ ডিসেম্বর খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিডনি বিভাগ চালু হয়

সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. সিদ্ধার্থ বাওয়ালী বলেন, খুমেকে কিডনি বিভাগ চালু হওয়ায় অসহায় ও দরিদ্র রোগীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। কারণ বেসরকারিভাবে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। একজন কিডনি রোগীর বায়োপসি করতে হলে বেসরকারিভাবে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এখানে বায়োপসি কিডনি রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ১ জানুয়ারি দুই জন রোগীর কিডনি বায়োপসি করেছি। এ ছাড়া নিয়মিতভাবে বিনা খরচে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। ডায়ালাইসিসসহ ক্যাথেটার দিয়ে বাইরে থেকে চিকিৎসা করাতে জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আমরা ফ্রিতে করাচ্ছি।

ডা. সিদ্ধার্থ বাওয়ালী আরও বলেন, একটি ডায়ালাইসিস মেশিন দিয়ে চিকিৎসাসেবা শুরু করেছি আমরা। কিডনি বিভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে জনবলের পাশাপাশি আরও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রয়োজন। এর মধ্যে আরও ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন এবং প্রোটাবল আলট্রাসনোগ্রাম প্রয়োজন। কারণ কিডনি রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ডায়ালাইসিস মেশিন।

খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, খুলনা জেলাতে কিডনি রোগীদের অসহায়ত্ব দিন দিন বাড়ছে। কারণ কিডনি রোগের চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। খুলনায় মোট আক্রান্ত রোগীর খুব কম সংখ্যক সরকারি সেবা পান। এখানে সবেমাত্র কিডনি বিভাগ চালু হয়েছে। ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন ও তিনটি প্রোটাবল আলট্রাসনোগ্রাম চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। মেশিনগুলো পাওয়ার পর খুলনার মানুষের কিডনি চিকিৎসায় নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।