‘‌ঘরে-বাইরে-রাস্তায় পানি, মুক্তি চাই’

ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করাসহ ছয় দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো যশোর কালেক্টরেট ভবনের (ডিসি অফিস) সামনে অবস্থান নিয়েছেন জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে সেখানে অবস্থান নেন তারা।

মণিরামপুরের কুশখালী এলাকার ৭০ বছর বয়সী সুলপান গোলদার বলেন, ঘরে-বাইরে-রাস্তায় পানি। এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই।

একই কথা বলেন কুলটিয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গা মহিষদিয়া গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব রাশিদা বেগম। তিনি বলেন, ঘর-বাড়িতে পানি থই থই করছে। আমাদের এলাকায় পানিতে ডুবে চার শিশু মারা গেছে। তাই জলাবদ্ধতা দূর করার দাবিতে আমরা ডিসি অফিসে এসেছি।

ছয় দফা দাবি আদায়ে টানা তিন দিন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির মনোহরপুর আঞ্চলিক শাখার আহ্বায়ক শেখর চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এই অঞ্চলের জল নিষ্কাশনের কার্যকর পদ্ধতি টিআরএম (জোয়ারাধার) প্রকল্প বাদ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সেচ প্রকল্প চালু করেছে। অবিলম্বে সেচ প্রকল্প বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জাতীয় কর্মশালায় গৃহীত ৯৬ শতাংশ মানুষের বলি কপালিয়া টিআরএম চালুর দাবি ছিল। কিন্তু সেই দাবি অগ্রাহ্য করে পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) নদী হত্যা করতে সেচ প্রকল্প চালু করেছে। যা ভবদহ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে কোনও কাজে আসবে না। আমরা চাই বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু করা হোক, আমডাঙ্গা খাল সংস্কার ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়া হোক।

এ আন্দোলনে সংহতি জানান জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতরা। কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, গাজী আব্দুল হামিদ, চৈতন্য কুমার পাল, অধ্যাপক অনিল বিশ্বাস প্রমুখ বক্তৃতা করেন। 

ছবি দফা দাবি হলো—সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান, নদী হত্যা, জনপদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা, ফসল-বসতবাড়ি-জানমালের ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; প্রস্তাবিত প্রায় ৪৫ কোটি টাকার ‘ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ’ অবিবেচনাপ্রসূত প্রকল্প বাতিল; ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়ায় টিআরএম (জোয়ারাধার) চালু; আমডাঙ্গা খাল সংস্কার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও কাজের স্বচ্ছতা আনতে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সেনাবাহিনীর তদারকিতে সম্পন্ন করা; ভবদহ স্লুইস গেটের ভাটিতে পাইলট চ্যানেল করতে ৫-৬টি স্কেভেটর লাগানো; ২১, ৯ ও ৮ ভেন্টের গেটসমূহ উঠানামা করানোর ব্যবস্থা এবং জনপদের মানুষের ক্ষয়ক্ষতির জন্যে ক্ষতিপূরণ, কৃষিঋণ মওকুফ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।