ফের ভয়ানক রূপে করোনা, খুলনায় মানুষের অবাধ চলাফেরা

দেশব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্তের হার বেড়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। জনসচেতনতা না থাকায় খুলনায় সংক্রমণ বাড়ছেই। করোনার এ উদ্বেগজনক সময়েও জনসমাগম হচ্ছে খুলনার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। চায়ের দোকানে হচ্ছে উন্মুক্ত আড্ডা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, যানবাহন, হাটবাজার সর্বত্র মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করছে মানুষ।

মহানগরীর শিববাড়ি, ডাকবাংলো, পাওয়ার হাউজ, ফেরিঘাট, ময়লাপোঁতা মোড়, টুটপাড়া কবরখানা মোড়, রূপসা, গল্লামারী, জোড়াগেট, বয়রা, বৈকালী, খালিশপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিভাগের আট জেলায় গতকাল ২৮৫ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। 

শুধু খুলনায় বুধবার ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯৪ জনের। শনাক্তের মধ্যে নগরীর ৮২ ও বাকি ১২ জন রয়েছেন পাঁচ উপজেলায়। এদিকে, বিভাগের আট জেলায় বুধবার ২৮৫ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা হয় এক হাজার ৮৩টি। যদিও এদিন বিভাগে ভাইরাসটিতে কারও মৃত্যু হয়নি।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সংক্রমণের শুরু থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট এক লাখ ১৪ হাজার ৭০৩ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৯ হাজার ৩৭২ জন। তিন হাজার ১৯৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। মোট শনাক্ত থেকে সুস্থ ও মৃতদের বাদ দিলে এখনও সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন দুই হাজার ১৩৪ জন। করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যু বিবেচনায় এখন পর্যন্ত বিভাগীয় জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে খুলনা। এই জেলায় শনাক্ত হয়েছে ২৮ হাজার ৩২২ জন এবং মৃত্যু হয় ৮০৯ জনের।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৮৮৮ জনের। একই সময়ে মারা গেছেন চার জন। এ পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ২৮ হাজার ১৮০ জন, শনাক্ত ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জন।

খুলনা জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। এটি পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম ও দেবাশীষ বসাক। বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালত আট মামলায় ১৩ জনকে ১২ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বশাক বলেন, ‘ওমিক্রনে গোটা বিশ্ব এখন খারাপের দিকে। নতুন করে করোনা শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করা হচ্ছে জরিমানা।’

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। যারা টিকা নিয়েছেন আর যারা নেননি, প্রত্যেকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন।’

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আরএমও এবং খুলনা ২০০ শয্যা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ফোকালপারসন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ২০ জন রোগী ভর্তি হন। এরমধ্যে আইসিইউতে এক, রেড জোনে তিন এবং ইয়েলো জোনে ১৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।