অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত বিল ডাকাতিয়া, শিকারির থাবা

ডাকাতিয়া বিলের জলাভূমি এখন অতিথি পাখিদের দখলে। পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে অতিথি পাখির দল। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত সমগ্র বিল। দলবেঁধে ডাঙায় বসে থাকার দৃশ্য দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে। আবার ডানা মেলে একসঙ্গে উড়ে বেড়ানোর দৃশ্যও উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা। কিন্তু শিকারির থাবা থামিয়ে দিচ্ছে অতিথি পাখিদের কলরব।
 
স্থানীয় ইউপি সদস্য নবিরুল ইসলাম রাজা বলেন, দিনরাত পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর কলতানে মুখরিত বিল। যা দেখে পাখি প্রেমীদের মন জুড়িয়ে যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য এই সুন্দর পাখিগুলো বিভিন্ন সময়ে শিকারির হাতে ধরা পড়ছে। রাতের আঁধারে শিকারিরা বিলের পানিতে জাল পেতে অবাধে পাখি শিকার করছে। সম্প্রতি একজন পাখি শিকারিকে হাতেনাতে আটক করেছে এলাকাবাসী। শিকারির কাছ থেকে পাখি ও জাল আটক করে পাখিগুলো মুক্ত করা হয়েছে। পরে শিকারি ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে আর পাখি শিকার করবে না বলে ক্ষমা চাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
 
প্রতি বছরের মতো এবারও শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে খুলনার শিরোমণি বাইপাস সড়ক ও ডাকাতিয়া বিলে আসতে শুরু করে অতিথি পাখির দল। প্রতিদিনই অতিথি পাখির দল আসছে। শীত প্রধান অঞ্চল থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আসছে অতিথি পাখির দল।
 
স্থানীয় কৃষক মাজেদ হোসেন জানান, পাখি শিকারিরা দিনের বেলা গরু-মহিষ চরানো, ধান চাষ, হাঁস চরানোর নামে ছদ্মবেশে হাওরে ঘোরাঘুরি করে। সুযোগ বুঝে বিষটোপের মাধ্যমে পাখি শিকার করে তারা সটকে পড়ে। আর সন্ধ্যার পর থেকেই ১০-১২ জন সংঘবদ্ধ হয়ে পাখি শিকারে নামে। তারা এ সময় জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে গভীর রাত পর্যন্ত। ভোর হওয়ার আগেই বিল থেকে চলে যায় তারা।
 
ইতোমধ্যে বিলে বিভিন্ন জাতের অতিথি পাখি এসেছে। এসব পাখির উপস্থিতিতে বিল ডাকাতিয়ায় পাখির মেলা বসেছে। বেশ কিছু বিপন্ন প্রায় ও বিরল প্রজাতির দেশি পাখি বছরজুড়ে বিলে অবস্থান নেয়। দেশি প্রজাতির এসব পাখির জন্য বিল ও আশপাশের এলাকা নিরাপদ আবাস হিসেবে গড়ে উঠেছে।
 
এখন পর্যন্ত ডাকাতিয়া বিলে অবস্থান নেওয়া অতিথি পাখির মধ্যে বেশি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে বড় পানকৌড়ি, পাতি-কুট। গিয়িরা হাঁস ও তিলা হাঁসও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
 
এই বিলে গত কয়েক বছর থেকে শীত মৌসুমে অতিথি পাখি ছুটে আসছে। নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের সন্ধানে তারা এখানে ছুটে আসে। দেশি পাখিদের সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ফলে শীত কমে আসলেও সহ্য ক্ষমতা পর্যন্ত এসব পাখি এখানে অবস্থান করে। শীতের তীব্রতার সঙ্গে বদলে যায় বিলের রূপ।
 
অতিথি পাখি সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ বিল্লাহ বলেন, অপরূপ সৌন্দর্যের এই বিলে নভেম্বরের শেষ থেকেই আসতে শুরু করে অতিথি পাখি। প্রতিদিন বিচিত্র রঙের অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত বিলটি।
 
বিল পাড়ের বাসিন্দারা জানান, অতিথি পাখির মধ্যে পানকৌড়ি, কাস্তেচড়া, কানিবক, ধুপনিবক, পাতিসরালী, ভুতিহাঁসসহ আরও অনেক প্রজাতির পাখি বিলে আসে। পাখিদের আসা অব্যাহত থাকায় বোঝা যাচ্ছে, আরও পাখি এই বিলে আসবে।
 
শিরোমণির বাসিন্দা কাদের হোসেন বলেন, দেশের পাখির মধ্যে বালি হাঁস, পাতি সরালি, বেগুনি কালেমসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস বিভিন্ন এলাকা থেকে বিলে আসছে। পাখিগুলো বিলে ও বিলের চারপাশে কচুরিপানার মধ্যে অবস্থান করছে। ফলে শিরোমণি ডাকাতিয়া বিল এখন অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত।
 
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, অতিথি পাখির আগমনে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি এসব পাখি আমাদের এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এই বিল পাখিদের একটি অন্যতম নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সেখানে পাখি শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।