বিদ্যালয় নয়, যেন ডোবা

বিদ্যালয় ভবনের দরজা-জানালা নেই। তার ওপর বছরের কয়েক মাস কচুরিপানাযুক্ত হাঁটু পানিতে ভর্তি থাকে। প্রথম দেখায় যে কেউ বলবে, এটা ডোবা, যেখানে রয়েছে একটি পরিত্যক্ত ভবন।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের সমনডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি এমনই। এসব প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। নেই উপযুক্ত স্কুল ভবন। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার মান। ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, চার লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। তবে কয়েক বছর ধরে ভবনের ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়েছে। পুরো ভবনও হাঁটু পানির নিচে থাকতে দেখা গেছে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মাঠের এক কোণে একটি টিনের চাল দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। যেখানে রাখা হয়েছে একটি টেবিল ও ৫টি বেঞ্চ। সেখানে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই শিক্ষা অর্জন করছে।

এ যেন পরিত্যক্ত ভবন

মাসুম হোসেন নামে একজন শিক্ষার্থী বলে, ‘করোনার কারণে আমদের স্কুল অনেক দিন বন্ধ ছিল। স্কুলের দরজা-জানলা নেই। বছরের অধিকাংশ সময় কচুরিপানাযুক্ত হাঁটু পানিতে ডুবে থাকে। সেজন্য স্কুলের খেলার মাঠের এক কোণে একটি টিনের চাল দিয়ে আমাদের পাঠদান করানো হচ্ছে।’

অভিভাবক আল মামুন বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। দুই উপজেলা ও ইউনিয়নের শেষ প্রান্ত হওয়ায় অবহেলিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। শ্রেণিকক্ষে ও খেলার মাঠে জমে থাকা পানিতে শিক্ষার্থীদের পানিবাহিত রোগ হয়।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন হোসেন বলেন, ‘এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে সু-শিক্ষায় গড়ে তুলতে হলে মাছের ঘেরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ভবনটি পুনর্নির্মাণ করা জরুরি।’

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক অমল কৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘৫১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি। দেখেছেন তো কী অবস্থা, কীভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাবো? শিক্ষার কোনও পরিবেশ নেই। আমদের নিজেদেরও খারাপ লাগে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানালেও কোনও কাজে আসছে না। অনেক শিক্ষার্থী আমার স্কুল থেকে চলে গেছে।’

তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০১৯ সালে নতুন ভবন তৈরির বাজেট ছিল। কিন্তু ভবন তৈরির জন্য মালামাল পৌঁছানোর ব্যবস্থা না থাকাতে বাজেটটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে এলাকাটি নিচু হওয়ায় বন্যায় পানি উঠে যায়। সেখানে নতুন করে সাইক্লোন শেল্টার করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে।’