৬ বছর ধরে ভুল বানানে সনদ দিচ্ছে সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিস

বিআরটিএ অফিস জানে না ইংরেজির সঠিক বানান। ইস্যুকৃত সব শিক্ষানবিশ লাইসেন্সে সাতক্ষীরা জেলার নাম ভুল করায় সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। ভুক্তভোগীরা বলছেন বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও গত ছয় বছর ধরে ভুলের কোনও সংশোধন মিলছে না। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি ভুলের বিষয়টি তাদের কেউ অবগত করেনি। 

সূত্র জানায়, সেন্ট্রাল সার্ভার ২০১১ সাল থেকে চালু হলেও ২০১৫ সাল থেকে সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিস শিক্ষানবিশদের জন্য সার্ভারের মাধ্যমে তিন মাসের জন্য শিক্ষানবিশ লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। সেই লাইসেন্সে সাতক্ষীরা জেলার বানানে ভুল রয়েছে। কিন্তু বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলেও বিষয়টির সমাধান মিলছে না। অভিযোগ রয়েছে গত ছয় বছর ধরে এ সমস্যা রয়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে সাতক্ষীরার বিআরটিএ’র তিন জন উপ-পরিচালক পরিবর্তন হয়েছেন। তবে বিষয়টির সংশোধন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ।

শিক্ষানবিশ লাইসেন্স পাওয়া ফাহাদ হোসেন বলেন, আমি অবাক হয়েছি। বিআরটিএ অফিস সাতক্ষীরা বানান জানে না, নাকি এটি ইচ্ছাকৃত ভুল। এটি সত্যি দুঃখের বিষয়। এত বছর ধরে সাতক্ষীরার ইংরেজি ভার্সন বানান ভুল লিখে আসছে কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরায় যত জনভোগান্তিমূলক সরকারি অফিস রয়েছে তার মধ্যে বিআরটিএ অন্যতম। তাদের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যস্ত কীভাবে জনগণের পকেট থেকে টাকা বের করে খাওয়া যায়? আবার সেই টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়েও চলে দরকষাকষি। কর্মকর্তারা এই লার্নার স্লিপ কখনও পড়ে দেখারও সময় পায় না। বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক নিয়মিত অফিস করেন না। এটা একটা পরিকল্পিত সিস্টেম। কেননা, ওই অফিসে কেউ যদি ঘুষ ছাড়া কাজ করতে যায় কর্মচারীরা সরাসরি বলেন সহকারী পরিচালক ছাড়া আমরা কাজটি করতে পারবো না। আর তাকে না পেয়ে বাধ্য হয়েই যেন সবাই ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে বাধ্য হয়। তাদের সময় নেই বানান সংশোধনের। তারা যে কত দায়সারাভাবে কাজ করে, এটাই তার প্রমাণ। বছরের পর বছর হেড লাইনেই বানান ভুল। বিআরটিএ’র উচিত সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা।

সাতক্ষীরা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, সাতক্ষীরার নামের বানান যদি ভুল হয় তাহলে কীভাবে হবে। অনেকে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স নিয়ে বাইরের দেশেও যায়। সেই দেশের কর্তৃপক্ষ আমাদের জেলার নামের বানান ভুল জানবে। সার্ভারের বানান ভুল হলেই ছয় বছর ধরে এই বানান লিখে যাবে এটি দুঃখের বিষয়। 

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ বলেন, ইংরেজি ভার্সনে সাতক্ষীরার নামের বানান ভুল করে বিআরটিএ অফিস দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তার ওপর বছরের পর বছর এই ভুল বানান ঠিক না হওয়া আরও  দুঃখের বিষয়। দ্রুত বিষয়টির সংশোধন করার দাবি জানান তিনি।

জেলার নামের বানানের ভুল বিষয়ে বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এএসএম ওয়াজেদ হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার ‘ইংরেজি’ বানান ভুলটি আমার চোখে পড়েনি। এটি সেন্ট্রাল সার্ভারের ভুল। সেন্ট্রাল সার্ভারে যা লেখা আছে আমরা তাই শুধুমাত্র সিলেক্ট করে দিয়ে প্রিন্ট দিয়ে দিই। এই ভুলের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কখনও লিখিত অভিযোগও করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ঢাকার সেন্ট্রাল সার্ভারে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।