আম্পানের ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই ধেয়ে আসছে ‘অশনি’

ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পানে’র আঘাতে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেননি সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ। এর মধ্যে আবার ধেয়ে আসছে ‘অশনি’ নামের আরেক ঘূর্ণিঝড়। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি এখন ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে রূপ নিয়েছে। এটি আঘাত হানলে বাঁধ ভেঙে আবারও এলাকা প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন উপকূলবাসী।

শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ বড় ভেটখালী গ্রামের সাইফুল ও রবি সরদার বলেন, ‘২০২০ সালে আম্পানের সময় বড় ভেটখালিতে ভাঙন দেখা দেয়। তারপর সেটা ঠিক করা হয়নি। যে ঝড় আসছে, সে ঝড়ের আগে যদি কাজ করা না হয় তাহলে বাঁধ ভেঙে যাবে। এলাকার হাজার হাজার বিঘার জমির মৎস্য সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

হরিনগর সিংহড়তলী গ্রামের বিশ্বজিত রায় বলেন, ‘২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পরে সিংহড়তলীর ভাঙন দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকদের বলার পরও কাজ করেনি। অশনি ঝড় আসছে। যদি বাঁধ ভেঙে যায়, তাহলে আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে।’

বুড়িগোয়ালীনির দুর্গাবাটি গ্রামের দিনেশ মন্ডল ও রতি রাণী বলেন, ‘ইয়াসের সময় বাঁধ ভেঙে ঘরবাড়িতে পানি উঠে গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে। আবার শুনছি অশনি নামের ঝড় আসছে। আমাদের পাউবোর রাস্তাগুলো ঠিক করে দিলে আর পানিতে ভাসতাম না। এবার যদি পানি ঢোকে তাহলে কথায় যাবো।’

মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম মৃধা বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জে তিনটি পয়েন্ট খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আমি বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানোর পরও তারা কাজ করছে না। অশনি নামের যে ঝড় আসছে, এই ঝড়ে অনেক জায়গা ভাঙার আশঙ্কা আছে।’

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ডালিম ঘরামী বলেন, ‘আম্পানের রেশ কাটতে না কাটতে আবার অশনি নামের ঝড়ের আভাস শোনা যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকা নদীবেষ্টিত। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়। সরকারি মহল থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও, তা বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় না। যে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে আতঙ্কে থাকি।’

এদিকে বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট আছে।’

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নটা দ্বীপ ইউনিয়ন। ২৮ কিলোমিটারের মধ্যে আটটি পয়েন্ট খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তাড়াতাড়ি কাজ না করলে অশনি ঝড়ে আবার ভেঙে প্লাবিত হবে। এছাড়া আমাদের বড় সমস্যা হলো, বেড়িবাঁধের অংশ আশাশুনির মধ্যে। এ কারণে আমাদের দাবি সঠিক পূর্ণ হয় না।’

সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সাধার‌ণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘উপকূলের মানুষের দুর্যোগ থেকে বাঁচতে হলে টেকসই বেড়িবাঁধ নিমাণের বিকল্প নেই। ষাটের দশকের নাজুক বেঁড়িবাধ আজও জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে চলছে। অশনি আমাদের উপকূলে আঘাত না হানলেও, নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট পানি বাড়লেই অনেক এলাকা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইয়াসের পর কিছু ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে কাজ করলেও শুভংকরের ফাঁকি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদানরা। ইয়াসের পরে উপকূলের ১৪৯ কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধের ২৯টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে। ইয়াসের আগে বুলবুল ঝড়ের পর ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ছিল। ইয়াসের পরে ১৪টা পয়েন্টের কাজ হলেও এখনও ভালোভাবে কাজ শেষ করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। খুব দ্রুত যদি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো কাজ না করা যায়, তাহলে সামনে যে অশনি নামের ঝড় আসছে তা উপকূলের মানুষ তাদের সর্বস্ব হারাবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ তিনটি, বুড়িগোয়ালীনি ৫টি, গাবুরায় ৭টি, পদ্মপুকুর ৮টি, কাশিমাড়ী ১টি, আটুলিয়ায় ১টি পয়েন্ট খুব ঝুঁকিপূর্ণ।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শ্যামনগর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, ‌‘আমরা ঘূর্ণিঝড় অশনির ক্ষতি কমাতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি। পর্যাপ্ত বালুভর্তি জিআই ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত আছে। অনেক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কাজ চলমান রয়েছে এবং অনেক কাজ হয়ে গেছে।’