৫ দিন ধরে লোকালয়ে বাঘ, আতঙ্কে গ্রামবাসী

সুন্দরবন থেকে লোকালয়ের ১০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়া একটি বাঘ গত পাঁচ দিন ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ পরপর কয়েক রাতে বাঘটি দেখতে পেয়েছেন। এসব লোকালয়ের মাঠের নরম মাটির একটি স্থানে বাঘের পায়ের ছাপ রয়েছে। এতে আতঙ্কে রাতে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। লাঠি হাতে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় চিংড়ি ঘের পাহারা দিচ্ছিলেন ইউপি সদস্য মো. আবুল হোসেন খান ও তার ছেলে। এ সময় টর্চ লাইটের আলোতে প্রথমে একটি বাঘ দেখতে পান তারা। তাদের ডাক-চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে বাঘটি পালিয়ে যায়। এ সময় মসজিদের মাইক থেকে গ্রামে বাঘ ঢুকে পড়ার খবর জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়। 

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ভরাট হওয়া ভোলা নদী পার হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘটিকে পরদিন লোকালয়ের ১০ কিলোমিটার ভেতরে শুক্রবার রাত ৮টায় আবারও দেখা যায়। ওইদিন রাতে মাঠে গরু আনতে গিয়ে একই উপজেলার খোন্তকাটা ইউনিয়নের বানিয়াখালি গ্রামে বাঘ দেখতে পান কৃষক কামাল হোসেন হাওলাদার। এরপর মাইকিং করে গ্রামবাসীকে সতর্ক করা হয়। শনিবার সকালে বাঘটির পায়ের ছাপ দেখতে পায় সুন্দরবন বিভাগ ও এলাকাবাসী। তবে বাঘটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রবিবার (৮ মে) রাত সাড়ে ১০টায় একই এলাকার খোন্তকাটা ইউনিয়নের নলবুনিয়া গ্রামের মাঠে গরু আনতে গিয়ে বাঘ দেখে দৌড়ে পালান হফিজুর রহমান শেখ নামে এক কৃষক। 

তিনি বলেন, ‘রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাঠে গরু আনতে যাই। গরু খোঁজার এক পর্যায়ে টর্চের আলো পড়ে বাঘের মুখে। বাঘ আমার দিকে তেড়ে এলে স্যান্ডেল ও মোবাইল ফেলে দৌড়াতে থাকি। এক পর্যায়ে পায়ে লুঙ্গি পেঁচিয়ে পড়ে যাই। পরে কোনোরকমে উঠে দৌড়ে প্রাণে বাঁচি।’

তিন রাত শরণখোলা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে বাঘ দেখতে পাওয়ায় ধানসাগর ও খোন্তকাটা ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাতে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এলাকাবাসী বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচতে লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছেন। সবাইকে সতর্ক থাকতে মসজিদ থেকে বার বার মাইকিং করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘটি যাতে মানুষ না মেরে ফেলে বা বাঘটি জানমালের কোনও ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাঘটি আবারও দেখতে পেলে দ্রুত বন বিভাগকে জানাতে বলা হয়েছে। বাঘটিকে আটকে সুন্দরবনে ফিরিয়ে আনা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘লোকালয়ে যাতে বাঘসহ বণ্যপ্রাণী প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের ৬০ কিলোমিটার লম্বা বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় পাওয়া গেলে দ্রত এই বেড়া নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এছাড়া সুন্দরবন সুরক্ষ প্রকল্পের মাধ্যমে ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা নদী পুনর্খনন করা হবে।’