মরা গাছের টেন্ডারে কাটা পড়েছে সড়কের ১২৮টি জীবিত গাছও

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের মাঝিরগাতী হতে সোনাকুড় সড়কে মরা ও শুকনা ৩৩৭টি গাছ কাটার টেন্ডার নিয়ে অতিরিক্ত ১২৮টি জীবিত গাছ কাটার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে এলাকাবাসীর ক্ষোভের পর উপজেলা প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটি এর প্রমাণ পেয়েছে। গত ১৯ মে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে; যা মঙ্গলবার (২৪ মে) প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম।

গত ৩১ মার্চ দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের মাঝিরগাতী হতে সোনাকুড় সড়কের পাশে অবস্থিত ৩৩৭টি মরা ও শুকনা শিশু গাছ প্রকাশ্যে নিলাম হয়। এস এম হাবিবুর রহমান তারেক নামের এক ব্যক্তি ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হন। এরপর তাকে ৫ এপ্রিল থেকে ৫ মে’র মধ্যে এসব মরা ও শুকনা শিশু গাছ কাটার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। 

অভিযোগ ওঠে, ঠিকাদার নির্ধারিত মরা ও শুকনা শিশু গাছের পাশাপাশি শতাধিক মূল্যবান জীবিত গাছ কেটে নিয়েছেন। এলাকাবাসী অতিরিক্ত গাছ কাটায় বাধা দিলে ঠিকাদার এস এম হাবিবুর রহমান তারেক তাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি প্রদান করেন। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেন। অবৈধভাবে গাছ কর্তনের প্রতিবাদে পরিবেশবাদী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন উপজেলা সদরে মানববন্ধন করে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ মে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) মো. আলীমুজ্জামান মিলনকে আহ্বায়ক ও উপজেলা প্রকৌশলী আবু তারেক সাইফুল কামাল এবং উপজেলা বন কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল হোসেনকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিটির আহ্বায়কসহ অন্য দু’জন সদস্য মিলে ১৭ মে বেলা ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মাঝিরগাতী হতে সোনাকুড় সড়কের দু’পাশের কর্তনকৃত গাছের সংখ্যা (গাছের গোড়া) গণনা করেন। তদন্তে নিলাম ক্রয়ের কার্যাদেশে উল্লেখিত ৩৩৭টি গাছের পরিবর্তে ৪৬৫টি গাছ কর্তনের নমুনা পাওয়া যায়। 

অবশ্য ঠিকাদার এস এম হাবিবুর রহমান তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তিনি টেন্ডারের বাইরে কোনও গাছ কর্তন করেননি।

অন্যদিকে ঠিকাদার এস এম হাবিবুর রহমান দিঘলিয়া উপজেলা যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য (সাময়িক বহিষ্কৃত) হওয়ায় উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। যার তদন্ত চলমান রয়েছে বলে যুবলীগ সূত্র থেকে জানা গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম বলেন, কার্যাদেশ বহির্ভুত বেশি গাছ কর্তনের বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা পরিষদের নিকট সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম জানান, উপজেলা পরিষদের সভা করে এ ব্যাপারে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া হবে।