শুকিয়ে গেছে সুপেয় পানির পুকুর, ভোগান্তিতে ২ লাখ মানুষ

বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভার দুটি সুপেয় পানির পুকুর শুকিয়ে গেছে। এতে নতুন করে বিপাকে পড়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। সুপেয় পানি না পেয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন পৌরসভার দুই লাখ বাসিন্দা।

লবণ অধ্যুষিত মোংলা পোর্ট পৌরসভায় সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। খাবার পানিসহ নিত্যদিনের পানি নিয়ে তাদের ভোগান্তিরও শেষ নেই। এ সংকট সমাধানে ২০০৮ সালে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের মাছমারা এলাকায় পুকুর খনন করে কৃত্রিমভাবে পানি ধরে বাসিন্দাদের চাহিদা মেটানো হয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় ২০১৬ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি পুকুর খনন করা হয়। মোট ৮৩ একর জায়গার ওপর ১০ ফুট গভীরতার পুকুর খননসহ দুটি ওভারহেড ট্যাংকও করা হয়।

শনিবার (১১ জুন) সরেজমিন মাছমারা এলাকায় দেখা যায়, সুপেয় পানি সংরক্ষণের পুকুর দুটি শুকিয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় চার ইঞ্চি গভীরতার পানি রয়েছে। তাতে ওভারহেড ট্যাংকে পানি ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না।

জানা গেছে, পুকুর দুটিতে বৃষ্টি ও নদীর পানি বিশুদ্ধ করে পৌরবাসীদের সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সরবরাহ করা সেই পানি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় এবং অনাবৃষ্টির কারণে পুকুর দুটি শুকিয়ে যাওয়ায় নতুন করে বিপাকে পড়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে পৌর শহরের বাসিন্দাদেরও ভোগান্তি বেড়েছে।

পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সেলিম এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডের আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘পৌর শহরের কোথাও মিষ্টি পানির উৎস নেই। কর্তৃপক্ষের একমাত্র সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে পানি দেওয়া হলেও তা ঠিকমতো পাই না। এ কারণে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।’

মোংলা পোর্ট পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহিদ বলেন, ‘পৌরসভায় দুই লাখ বাসিন্দার পানির চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন ৬০ লাখ লিটার পানির চাহিদা থাকলেও ৩০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানির উৎস শুকিয়ে যাওয়ায় ৩০ লাখ লিটার পানির ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।’

সুপেয় পানির সংকটে পৌরবাসীর ভোগান্তি হচ্ছে স্বীকার করে পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিগত সময়ে অপরিকল্পিতভাবে এই পুকুর দুটি খননের কারণে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। পুকুর দুটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে এই দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছে।’ পুকুর খননে যারা অনিয়ম করেছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

মেয়র আরও বলেন, ‘পৌর বাসিন্দাদের ভোগান্তি লাঘবে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্ধিত একটি প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই এই সংকট নিরসন করে চাহিদা অনুযায়ী সুপেয় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’

পানির প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্বে থাকলেও, সংশ্লিষ্ট উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তারা এর দিকে ফিরেও তাকান না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মোংলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহান আহম্মেদ বলেন, ‘পানির প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে পৗর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করার পর আমাদের আর কোনও দায়িত্ব নেই।’