সুন্দরবনসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ভেসে গেছে ৪ শতাধিক মাছের ঘের

টানা বৃষ্টি ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের সুন্দরবনসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে চার শতাধিক মাছের ঘের, কয়েকশ ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষ। সুন্দরবনে পানি বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে বন্যপ্রাণী।

স্থানীয়রা জানান, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি কখনও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেইসঙ্গে জোয়ারের পানি বাড়ছে। বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানিতে মোংলা, শরণখোলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও পুকুর। মোংলা বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে।

উপকূলীয় উপজেলা মোরেলগঞ্জে পানগুছি নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কমপক্ষে চার ফুট বেড়েছে। ফলে উপজেলা সদরসহ নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ

রবিবার (১৪ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত পৌর শহরের বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি উঠে যায়। কোনও প্রকার বন্যা ছাড়াই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও পূর্ণিমার প্রভাবে গত কয়েকদিনের চেয়ে রবিবার পানির উচ্চতা বেশি দেখা গেছে। শহরের শতাধিক পুকুর ও মৎস্য ঘের ডুবে গেছে। মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ ২০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ও গৃহপালিত পশু পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বাগেরহাট শহরের ভ্যানগাড়ি চালক ওবায়দুল শেখ বলেন, পেটের দায়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি। তবে রাস্তায় মানুষজন কম। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ফলে যাত্রী পাচ্ছি না।

শরণখোলার খোন্তাকাটা এলাকার আব্দুল হাসিব বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে শরণখোলার বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টিতে মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। আমরা বিপাকে।

এদিকে, লঘুচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে রামপাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শতাধিক চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে এবং বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। এতে চিংড়ি ঘের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া ইউনিয়ন, বাঁশতলী ইউনিয়ন, পেড়িখালী ইউনিয়ন, রামপাল সদর ইউনিয়ন, হুড়কা ইউনিয়ন, রাজনগর ইউনিয়ন, বাইনতলা ইউনিয়ন ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের শতাধিক ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষি ও স্থানীয়রা। 

সুন্দরবনে পানি বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে বন্যপ্রাণী

ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ নূরুল আমিন বলেন, হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেক ঘেরের বেড়িবাঁধ ভেঙে মাছ ভেসে গেছে। বিশেষ করে জিয়লমারী, বেতকাটা ও চন্দ্রাখালী এলাকার সরকারি রাস্তা ডুবে গেছে। চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন।

গৌরম্ভা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাজীব সরদার বলেন, পানিতে ডুবে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও নির্ণয় করা হয়নি।

রামপাল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস বলেন, রামপাল সদর, রাজনগর, ভোজপাতিয়া, পেড়িখালী, বাঁশতলী ও গৌরম্ভাসহ বেশ কিছু ইউনিয়নের চার-পাঁচ শতাধিক ঘের ভেসে গেছে। এর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। আমরা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করছি। চাষিরা যাতে মাছ রক্ষা করতে পারেন সেজন্য জাল দিয়ে ঘেরাও করে রাখতে বলা হয়েছে।

বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানিতে মোংলা, শরণখোলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির কারণে বন্দরের পশুর চ্যানেলে ও হারবাড়িয়ায় বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস-বোঝাই কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে বন্দরের জেটিতে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে রবিবার সুন্দরবনে পানি বেড়েছে। গতকালের চেয়ে এক ফুট পানি বেড়ে চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ সুন্দরবন। বন্যপ্রাণীরা নিজেদের রক্ষার কৌশল জানে। তাই তারা নিরাপদে আছে। তবে কিছু ছোট ছোট প্রাণীর ক্ষতি হতে পারে। করমজলের প্রাণীরাও নিরাপদে আছে বলে ধারণা করছি আমরা।