উন্নয়ন হতে পারে কেবল শেখ হাসিনার হাতে: এমপি নাবিল

যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে জ্বালানি তেল ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। আপনাদের অনেকের কষ্ট হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সে কথা জানেন ও বোঝেন। তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। দ্রুত এই সমস্যা মোকাবিলা করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। আপনারা ধৈর্য ধরুন।  উন্নয়ন হতে পারে কেবল শেখ হাসিনার হাতে। একজন কর্মী হিসেবে তার হাতকে শক্তিশালী করবো।’

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) যশোর শহরের বকুলতলা মোড় জাতীয় শোক দিবসের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আলোচনা ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় মহিলা লীগের নেত্রীদের উদ্দেশে নাবিল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে জয়যুক্ত করা। এ জন্য মহিলা লীগের সব নেত্রীকে বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগামী নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনেই আমাদের জয়লাভ করতে হবে। বাংলার মানুষের আস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আছে। আপনারা নারী হিসেবে অবশ্যই শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াবেন। তার হাতকে শক্তিশালী করবেন। যশোরকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করবেন। আগামী নির্বাচনে নৌকার সব প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবেন। সংসদ সদস্য হিসেবে আমি আপনাদের পাশে আছি।’

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপস করেননি বলেই তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ ফিরিয়ে দেন। এরপর তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। তার ডাকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ৩০ লাখ প্রাণ ও দুই লাখ ৩০ হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা লাল-সবুজ পতাকা ও স্বাধীন দেশ পাই। স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে পুনর্গঠন করছিলেন তখন যারা দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তারা ও তাদের বিদেশি প্রভুরা মিলে চক্রান্ত শুরু করে। তারা একের পর এক কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। বঙ্গবন্ধু যখন সবকিছু মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করাচ্ছিলেন, তখন ৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য তাকে হত্যা করা হয়।’

এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নব্য পাকিস্তান কায়েম করা হয়। পঁচাত্তরের পর একের পর এক সামরিক জান্তা, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সময় বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তানে পরিণত করে। তখন রেডিওতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের কথা নির্বাসিত করা হয়। পাকিস্তান যে আমাদের শত্রু ছিল এই কথাও রেডিওতে বলা হতো না। বাংলাদেশকে একটি নতুন পাকিস্তানে পরিণত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সব স্মৃতি তারা নিশ্চিহ্ন করতে মেতে ওঠে। আমাদের সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এরপর শেখ হাসিনা দেশের ফিরে দলের হাল ধরেন। এরপর এক গণতান্ত্রিক আন্দোলন করেন। ৯৬ সালে তিনি ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন। তার সময়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি গৃহীত হয়। নারীদের জন্য দুস্থ, বিধবা, বৃদ্ধ ভাতা চালু করেন। আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে ২০০১ সালের নির্বাচনে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশের অগ্রগতি স্তব্ধ করার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করে। তারা ২০০৫ সালের আগস্টে একসঙ্গে ৫০০টি সিরিজ বোমা হামলা চালায় সারা দেশে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা চালায় আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করার জন্য। সেই সময়ে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তখন স্লোগান হতো, বাংলা হবে আফগান আমরা হবো তালেবান। সবাই মনে করতো বাংলাদেশ হবে পরবর্তী আফগানিস্তান।’

নাবিল আহমেদ আরও বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজ করা শুরু করেন। একের পর এক বিভিন্ন সূচকে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি। বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নারীর ক্ষমতায়নে। নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি তিনি কাজ করেছেন। বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন। নারী শিক্ষা, নারী স্বাস্থ্য ও সেবা, শিশুমৃত্যু রোধে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় আমরা এগিয়ে আছি। সব কাজে নারীদের যুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী সবসময় গুরুত্বারোপ করেন। যশোরের নারীরাও সৃজনশীল নানা কাজে যুক্ত আছেন। নারী নেত্রীদের কাজ হলো সব নারীকে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত করা।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা লীগ সভাপতি লাইজু জামান। উপস্থিতি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান মিন্টু, উপ-প্রচার সম্পাদক লুৎফুল কবীর বিজু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদি হাসান।